অনলাইন ডেস্ক | ০২ মার্চ ২০১৭ | ৮:৫৫ পূর্বাহ্ণ
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে বিবদমান বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান অ্যাডভোকেট ও সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার গ্রুপের দ্বন্দ্বে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কিছুক্ষণের জন্য বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কুমিল্লা ক্লাবের ফয়জুন্নেছা স্যুট। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এনামুল হক শামীম বিশ্রাম নিতে ওই স্যুটে গেলে সেখানে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। অতীত কৃতকা- নিয়ে তারা একে অন্যের ওপর দোষ চাপান। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা বিরক্ত হয়ে পড়েন। পরে এনামুল হক শামীমের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ওই স্যুটে কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কবিরুল ইসলাম শিকদার কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, গত সিটি নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী দিয়েও দলেরই দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য অধ্যক্ষ আফজল খানকে নিয়ে বিজয়ী হতে পরিনি। তিনি আরও বলেন, গতবার আমি জানটা দিয়েছি, আমার জ্বলে না? এ সময় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার ছোট ভাই নোমান প্রশ্ন রেখে বলেনÑ বার বারই আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়। এ সময় হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও অধ্যক্ষ আফজল খানের পক্ষে-বিপক্ষে কথা উঠলে কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মাহমুদ শহীদ উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাহার ভাইকে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার পরও আফজল খানের ছেলে ইমরান নির্বাচন করেন। তারাই বার বার দলের বিপক্ষে যান। এ সময় মেয়র প্রার্থী সীমা বলেন, এবার তো নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, এখন কেন চাচা আমাকে সমর্থন দেন না। তার সঙ্গে নোমানও নানা কথা বলতে থাকেন। এ সময় চারদিক থেকে নানা উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে থাকে। একপর্যায়ে আবদুল্লাহ মাহমুদ শহীদ নোমানের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, এমপিকে নিয়ে কথা বলবে এটা ধৃষ্টতা। আমরা কুমিল্লা শহরে ভাইস্যা আসছি নাকি। উত্তেজনা একপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় শোরগোল। তবে কেন্দ্রীয় নেতা মো. এনামুল হক শামীম সরাসরি হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এনামুল হক শামীম সীমাকে বলেন, আপনি সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করুন। আওয়ামী লীগের সবাই আপনার ভাই। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। বাহার ভাই সম্পর্কে সাংবাদিকদের কাছে ‘চাচা আমাকে দোয়া ছাড়া কিছুই দেননি’ বলে ভুল করেছেন। আপনার বলা উচিত ছিলÑ ‘বাহার চাচাই আমাকে বিজয়ী করাবেন।’
এ সময় কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে কারণ ছাড়া কথাই বলবেন না। তারা বিরোধ টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে। তাদের এড়িয়ে চলবেন। এ সময় শামীম বলেন, যে যত বড় কথাই বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে এবং শেখ হাসিনার আশীর্বাদ না থাকলে সবই জিরো। সবাই দলের জন্য কাজ করুণ। অতীত ভুলে যান।
আওয়ামী লীগ কুমিল্লায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে : শামীম
আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এনামুল হক শামীম বলেছেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচন পরিচালনার জন্য কুমিল্লায় এসেছি। আওয়ামী লীগ কুমিল্লায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে। গতকাল সন্ধ্যায় কুমিল্লা ক্লাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব মীমাংসা করতে শামীমের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চার সদস্য গতকাল দুপুরে কুমিল্লা আসেন।
শামীম বলেন, সারা দিন অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকেই থাকবে। মনোনয়ন পাবেন একজন এটাই নিয়ম। যিনি মনোনয়ন পান তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। শামীম আরও বলেন, এ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের কর্মতৎপরতা দেখে দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে। আর যারা দলের বা নৌকার বিপক্ষে থাকবেন, তিনি যেই হোন তাকে জবাবদিহিতা করতেই হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ মো. ওমর ফারুক, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা, কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মাহমুদ শহীদ প্রমুখ।