সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক, সম্পাদক ও প্রকাশক আজকের অগ্রবাণী | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ
মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন তালুকদার (মাহাবুব তালুকদার) ছিলেন সম্পর্কে আমাদের ফুফাতো ভাই। আপন রক্তের না হলেও আপনের চেয়েও তিনি ছিলেন পরম আপন আত্মীয়। নিজের আপন ফুফাতো ভাইদের সঙ্গে বছরে একদিনও কথা হলেও মাহাবুব ভাইয়ের সঙ্গে কথা হতো প্রায় প্রতিদিনই। আমার স্ত্রী যখনই আমাকে অনেক সময় নিয়ে ফোনে কথা বলতে দেখতেন তখনি বুঝে নিতেন মাহাবুব ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি। কারণ আমি কখনই এক/দুই মিনিটের বেশি কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলি না। এমনকি আমার স্ত্রীর সঙ্গেও না। কিন্তু মাহাবুব ভাই ফোন দিলে কথা হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। সেটা আমার স্ত্রী এবং মাহাবুব ভাইয়ের স্ত্রী দুইজনই সাক্ষী।
মাহাবুব ভাইকে আমরা হারিয়েছি গতবছর ১০ সেপ্টেম্বর। আরবী তারিখ অনুযায়ী ৭ জিলহজ্ব। মাহাবুব ভাইয়ের মৃত্যুতে কার কি ক্ষতি হয়েছে জানিনা। কিন্তু আমার হয়েছে অপূরণীয় ক্ষতি। যা আমি কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। মাহাবুব ভাইয়ের মৃত্যুতে তার ছেলেরা হয়তো তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু আমি হারিয়েছি আমার স্বপ্ন। আমি হারিয়েছি আমার ভবিষ্যৎ।
আজ আমার লেখা পড়ে হয়তো অনেকে রাগ হতে পারেন তবুও লিখছি। আমাদের মহেশপুরের রাজনীতিতে নীতি কতটা আছে সেটা মহেশপুরের প্রতিটা লোকই জানেন। এখানে রাজনীতি হচ্ছে সামনে সুনাম পিছনে এমন বদনাম যা হাজারীবাগের ট্যানারীর চেয়েও দুর্গন্ধ। মুখে মুখে আমার অনেক আপন দাবী কারী মহেশপুরের নেতারা যখন আমার বিরুদ্ধে কথা চালাচালি করতেন, তখন একমাত্র তিনিই আমার পক্ষ নিতেন। মন্দ লোকের কথায় আমি যখন হতাশ হতাম তখন মাহাবুব ভাই বলতেন, “আরে পাগল এতো হতাশ হওয়ার কি আছে তোমার মাহাবুব ভাই তো আছে”। মাহাবুব ভাই ছিলেন আমার কাছে বটগাছ। তার অবর্তমানে আমি এখন মহেশপুরের কাউকে আমার জন্য অতি দুর্বল লাটিম গাছও মনে করি না।
আমি আগেই বলেছি মাহাবুব ভাইয়ের মৃত্যুতে তার ছেলেরা হয়তো তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু আমি হারিয়েছি আমার স্বপ্ন। আমি হারিয়েছি আমার ভবিষ্যৎ। কিন্তু কেন? আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। মহেশপুরবাসী ভালো নেতৃত্ব পাবে। রাজনীতিতে মানুষের মূল্যায়ন হবে। মাহাবুব ভাই চেয়ারম্যান হবেন। এলাকার উন্নয়ন করবেন। সত্যি কথা বলতে কি কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান জানে আলম বিরু মিয়া মহেশপুরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছাড়ার পর মহেশপুর আর কোন ভালো চেয়ারম্যান পায়নি। আমরা আশা করতে শুরু করেছিলেন মাহাবুব ভাই জানে আলম বিরু মিয়ার মতো মহেশপুরের যোগ্য চেয়ারম্যান হবেন। মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। এলাকার উন্নয়ন হবে। মাহাবুব ভাই শুধু একজন চেয়ারম্যানই নয় মহেশপুরের পজিটিভ রাজনীতির প্রবর্তক হবেন সেমনটিই আশা করেছিলাম। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা মাহাবুব ভাইকে হয়তো আরো উচ্চস্থান দান করবেন দেখে আমাদের এ স্বার্থের দুনিয়া থেকে তাকে নিয়ে গেছেন।
এখানে বলে রাখি, একজন ইউপি চেয়ারম্যান বা ইউনিয়ন পর্যায় বা থানার নেতারা ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে কোন গুরুত্ব বহন করেনা। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা জরুরি মনে করি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে মিডিয়া জগতে একটা সম্মান জনক অবস্থানে আছি। জাতীয় দৈনিক আজকের অগ্রবাণীর সম্পাদক ও প্রকাশক হওয়ায় অনেক জেলার সভাপতি-সম্পাদকদের পর্যন্ত সাক্ষাতের জন্য বসিয়ে রাখি। কিন্তু মহেশপুরের একজন মেম্বার তো দূরের কথা একজন সাধারণ মানুষকেও সম্মান করি। কারণ এটা নিজের এলাকা। এ এলাকার ভালো মন্দের সঙ্গে নিজের ভালো মন্দ জড়িত। মাহাবুুব ভাইয়ের হাতে এলাকার নেতৃত্ব গেলে তিনি ভালো ভাবে চালাতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস ছিলো। কিন্তু মাহাবুব ভাইয়ের মৃত্যুর পর সক্রিয় রাজনীতি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
আমি যখনই ছুটিতে বাড়ি যেতাম মাহাবুব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতাম। অথবা ভাই যদি শুনতেন আমি বাড়ি এসেছি নিজেই চলে আসতেন। এমন কোন ঈদ নেই যেদিন মাহাবুুব ভাই আর আমি এস সঙ্গে না বেড়িয়েছি। সর্বশেষ তার জীবনের শেষ ঈদও আমরা এক সঙ্গে কাটিয়েছি। আমি আমাদের গ্রামের মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে স্ত্রী, মেয়ে আমিনা ও ভাই গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে সর্ব প্রথম মাহাবুব ভাইয়ের বাড়ি গেছি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে মাহাবুব ভাইয়ের ছোট ভাই সালাহ উদ্দীন ভাইয়ের কাশিয়ানীর বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে আমার ছোট বোন কাজলের বাড়িতে গেছি। পরপর দুই ঈদ আমি এবং মাহাবুব ভাই কাজলের বাড়ি যাওয়ায় কাজল বলেছিলো ভাই সামনে ঈদে আসলে হ্যাটট্রিক হবে। ভাই কথা দিয়েছিলো হ্যাটট্রিক করবে। কিন্তু আল্লাহ হ্যাটট্রিক করার আগেই তাকে নিয়ে গেছেন।
সব শেষে বলছি, মাহাবুব ভাইয়ের এই বিয়োগ কখনোই পূরণ হবার নয়। হয়তো অনেক কিছু যোগ করা যাবে কিন্তু এ এমন এক বিয়োগ যা পূরণ করতে কেউ পারবে না। ভাইয়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে তার আত্মার শান্তি কামনা করছি আর আল্লাহ্ যেন তার সমস্ত জানা-নাজানা গুনাহ মাফ করে তাকে বেহেস্তবাসী করেন সেই দুয়াই করছি।