আজকের অগ্রবাণী ডেস্ক | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ২:১১ অপরাহ্ণ
রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ ওরফে ডিস কালাম অপহরণের নামে তার নিজেরই সাজানো নাটকের অবসান হয়েছে। শনিবার ভোর রাতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থেকে সে নিজে স্বেচ্ছায় বের হয়ে আসেন।
এরপর তিনি তার বাড়ি পুঠিয়ার নামাজগ্রামে এসে উপস্থিত হোন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুঠিয়া থানার ওসি সায়েদুর রহমান।
ওসি জানান, শনিবার ভোর রাতে আবুল কালাম আজাদের পরিবারের পক্ষ থেকে তার ফিরে আসার কথা থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। সকালে তিনি ঈদ করতে বাসায় এসে উপস্থিত হোন বলেও পুলিশকে জানায় তার পরিবারের লোকজন।
ওসি সায়েদুর রহমান ভূইয়া বলেন, মাইক্রোচালক বিপ্লবের দেয়া তথ্য, অজ্ঞাত ওই যুবকের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ট্যাগ করে যে সমস্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে তাতে প্রমাণ হতে বাঁকি থাকে না এটি আবুল কালামেরই সাজানো নাটক ।
এদিকে একাধিক সূত্র দাবি করেছে, জেলা যুবলীগের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওবাইদুর রহমারকে ফাঁসাতেই এই অপহরণ নাটকের আশ্রয় নেয় আওয়ামী লীগ নেতা কালাম।
তার ছেলে দোয়েল অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় মামলা করলেও ওবাইদুরকে আটক করার জন্য তার পক্ষ থেকে এবং ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতার পক্ষ থেকে ওবাইদুরকে আটক করতে থানা পুলিশকেও বার বার চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। তবে সাজানো নাটক প্রমাণ হওয়ার পর কালাম এবং তার ছেলে দোয়েলকে আটক করে রিমান্ডে নেয়ার দাবি করেছেন যুবলীগ নেতা ওবাইদুর।
তিনি বলেন, এই ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য কালাম এবং তার ছেলেকে দ্রুত আটক করে রিমান্ডে নেয়া হোক।
আর এটি না করলে তারা পরবর্তিতে আমার আরো বড় ক্ষতি করবে।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট বুধবার রাত ৮ টার দিকে র্যাব পরিচয়ে বানেশ্বর বাজার বনিক সমিতির কার্যালয় থেকে ৪-৫ জন যুবক আবুল কালাম আজাদকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলে।
ঘটনার পর আবুল কালাম আজাদের ছেলে বাদী হয়ে অজ্ঞানামা আসামী করে থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করেছে। মামলা তদন্তে নেমে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসসহ চালক বিপ্লব হোসেনকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সায়েদুর রহমান ভূইয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাইক্রোবাসের চালক বিপ্লব হোসেনের দেয়া তথ্য মতে, বুধবার সন্ধা ৭ টার দিকে নাটোর মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে অজ্ঞাত এক যুবক বিপ্লবের মাইক্রোবাসটি ভাড়া করে।
চালক বিপ্লব হোসেন পুলিশকে জানান, মাইক্রোবাস ভাড়াকারী অজ্ঞাত ওই যুবক তার এক বড় ভাই বানেশ্বর বাজার থেকে টাকা নিয়ে নাটোর আসবে বলে মাইক্রোবাসটি ভাড়া নেয়। নাটোর মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে বানেশ্বরের দিকে রওনা হয় চালক বিপ্লব। পথে সুলতানপুর এসে একটি ক্লাব থেকে আরো তিনজন যুবক মাইক্রোতে ওঠে। অজ্ঞাত ওই যুবকসহ চারজন যুবককে নিয়ে রাত ৮ টার দিকে বানেশ্বর বনিক সমিতি অফিসের সামনে দাঁড়ায় মাইক্রোবাসটি।
বিপ্লব আরো বলেন, বনিক সমিতি অফিসের সামনে দাঁড়ালে মাইক্রোবাস থেকে ওই যুবক নেমে বনিক সমিতি অফিসে গিয়ে আবুল কালাম আজাদকে সাথে নিয়ে নিচে নেমে আসে। ওখানে যাওয়ার তিন মিনিটের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ মাইক্রোবাসটিতে নিজেই পায়ে হেঁটে এসে উঠে পড়েন।
কালামকে তোলার সময় তার অবস্থা কেমন ছিলো জানতে চাইলে বিপ্লব বলেন, তারা দুজনে গল্প করতে করতে অফিস থেকে নেমে হাঁসতে হাঁসতে গাড়িতে উঠেছেন এবং বানেশ্বর যাওয়ার পথে কয়েকবার মোবাইলে কথাও বলেছিলেন অজ্ঞাত ওই যুবক। পথে তাদের সাথে নিখোঁজ কালামের তেমন কথা বার্তা হয়নি বলেও জানান বিপ্লব।
বিপ্লব জানান, বনেশ্বর থেকে নাটোর কাফুরিয়া এসে আবুল কালাম আজাদ নেমে যান এবং মোবাইলে বাকি কথা হবে অজ্ঞাত ওই যুবককে এই বলে চলে যান ডিস কালাম। পরে অজ্ঞাত চার যুবককে নাটোর শহরের পৌঁছার আগেই ভাড়া পরিশোধ করে মাইক্রোবাসটি ছেড়ে দেন তারা ।
অপরদিকে মাইক্রোচালক বিপ্লবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাইক্রোভাড়াকারী অজ্ঞাত যুবক সুলতানপুর গ্রামের স্বশুরবাড়িতে রাতেই অভিযান চালানো হয়। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অজ্ঞাত যুবকটি পালিয়ে যায়। তবে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোবাইল ফোন কল ট্যাগ করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও পেয়েছে পুলিশ তবে তদন্তের সার্থে তা প্রকাশ করেনি।