সালাহ উদ্দীন রাজ্জাক: সম্পাদক ও প্রকাশক আজকের অগ্রবাণী | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ
সাংবাদিক কাজী সিরাজ। পুরো কাজী সিরাজ উদ্দিন আহমেদ। কাজী সিরাজ নামেই পরিচিত ছিলেন। আমার সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা ছিলো দীর্ঘ ৮ বছরের। কাজী সিরাজ ও আমার বয়সের পার্থক্য ৪০ বছরের। কিন্তু সম্পর্ক ছিলো ক্লাসমেটের মতো। আমি যেকোন বিপদে পড়লেই উনার সরনাপন্ন হতাম। ফ্রি সময়ে উনার বাসায় অথবা সাপ্তাহিক রোববারের অফিসে গিয়ে আড্ডা দিতাম। উনি যখনই বসুন্ধরা সি ব্লকে উনার মেয়ের বাসায় আসতেন তখনই আমাকে ফোন করতেন। কারণ আমি দীর্ঘদিন বসুন্ধরা ডি ব্লকের বাসিন্ধা। মেয়ের বাসায় বেড়িয়ে উনার নিজের বাসা বনশ্রী যাওয়ার আগে প্রায়ই আমার বাসায় আসতেন। কথা বলতেন। আড্ডা দিতেন।
আগেই বলছি কাজী সিরাজ ও আমার বয়সের পার্থক্য ৪০ বছর। তবুও উনি কখনোই আমাকে তুমি বলতেন না। সব সময় আপনি বলতেন। মানুষকে কিভাবে সম্মান করতে হয় উনি জানতেন। আমি কখনোই দেখিনাই উনাকে কারো ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করতে।
সাংবাদিক কাজী সিরাজের সঙ্গে আমার সপ্তাহে কমপক্ষে তিন চার বার কথা হতো। কাজ ছাড়া বেশি ভাগ কথা হতো রাজনৈতিক ও পারিবারিক। যান্ত্রিক এ যুগে সবাই যখন স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, তখন তিনি নি:স্বার্থ ভাবে খোঁজ খবর নিতেন। সর্বশেষ কথা হয় মঙ্গলবার। উনি আমাকে প্রথমে একবার ফোন করেন। ব্যস্ত থাকায় রিসিভ করতে পারিনি। পরে মিনিট দশেক পরে আবার কল করেন। ফোন ধরতেই হাসি মুখে কথা ইদানিং তো পাত্তাই দেন না। ক্ষমতায় চলে গেলেন নাকি। আমি হাসি দিয়ে বললাম স্যার, বাড়ি গোপালগঞ্জ ক্ষমতায় তো আছিই। উনি হেসে হেসে বললেন ও আপনি তো গোপালি।
জিলহজ্জ মাসটি আমার জন্য খুব কষ্টের । গত বছর ৮ জিলহজ্ব আমি আমার প্রিয় বড় ভাই শিহাব উদ্দিন তালুকদার (মাহাবুুব) ভাইকে হারিয়েছি। গতকাল ছিলো তার একবছর। এবার হারালাম প্রিয় কাজী সিরাজ ভাইকে। ঠিক দুইবছর আগে এমাসেই হারিয়েছিলাম আমার আরেকজন প্রিয় ব্যক্তি হিটু কাকাকে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনে শুরু থেকেই আছি। সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করার সুবাদে সব লেখকদের সঙ্গে ছিলো আমার আন্তরিক সম্পর্ক। আমাদের নিয়মিত লেখকদের মধ্যে থেকে আমরা এ পর্যন্ত চারজন কে হারিয়েছি। সর্বপ্রথম ২০১২ সালে হারাই প্রিয় সৈয়দ রেজাউল হায়াতকে। যিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলার রাজধানী ঢাকার প্রথম ডিসি ও বঙ্গবন্ধুর পিএস। তার পর হারালাম প্রিয় লেখক সাদেক খানকে। যিনি ছিলেন পাকিস্তানের স্বীকারের ছেলে। তার আপন ছোট ভাই বর্তমান বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। আমার বাসায় বেড়াতে এসে সবাই অবাক হয় হাতির দাঁতের চামচ দেখে। যা আমাকে সাদেক ভাই থাইল্যান্ড থেকে এনে দিয়েছিলেন। এর পর হারালাম সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরীকে। তিনি মারা গেছেন কাওরান বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায়। আর সর্বশেষ হারালাম সাংবাদিক কাজী সিরাজকে।
আমাদের এই প্রিয় চার লেখক মারা গেছেন হঠাৎ করে। আমাদের কাউকে বুঝতেই দেননি। মানুষ মাত্রই মরনশীল সবাই মরবে। তবে তাদের আকষ্কিক এ মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আল্লাহ তাদের বেহেশত নসীব করুন। আমীন।