মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম | ১৫ জুলাই ২০১৭ | ১২:০২ অপরাহ্ণ
ইসলামের দৃষ্টিতে যেকোনো পরিস্থিতিতে সততা ও সত্যবাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম । সত্যবাদিতা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগী হও।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)। মহান আল্লাহ আরও এরশাদ করেন, ‘যদি তারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করত, তবে তাদের জন্য তা কল্যাণকর হতো।’ (সুরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ২১)
সত্যবাদিতার পুরস্কার জান্নাত, আর মিথ্যার শাস্তি জাহান্নাম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা পরিহার করা ও সত্য বলার বিষয়ে অনেক বেশি সতর্ক করেছেন। একটি হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সত্যকে অবলম্বন করো। কারণ সত্যবাদিতা ভালো কাজে উপনীত করে। আর ভালো কাজ উপনীত করে জান্নাতে। মানুষ সত্য বলে ও সত্যবাদিতার অন্বেষায় থাকে। একপর্যায়ে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিখিত হয়ে যায়। আর মিথ্যা থেকে দূরে থাকে। কারণ মিথ্যা উপনীত করে পাপাচারে। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬০৭)।
সত্যের বিপরীত বস্তু হলো মিথ্যা। মিথ্যা শয়তানের অন্যতম ধারালো অস্ত্র। মিথ্যা বলা কবিরা গুনাহ। মিথ্যাবাদী মানবসমাজের বড় শত্রু। মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় তারাই মিথ্যা আরোপ করে যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে না। প্রকৃতপক্ষে তারাই হলো মিথ্যাবাদী।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১০৫)
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এটি একটি বড় বিশ্বাসঘাতকতা যে তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছ এবং সে তোমাকে বিশ্বাস করে, অথচ তুমি তাকে মিথ্যা বলছ।’ (আততারগিব, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৫৯৬)
যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ উপলব্ধি করেন যে, সত্য বলা মানুষের একটি উৎকৃষ্ট গুণ; আর মিথ্যা বলা একটি নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। একজন ভালো মানুষ সবসময় সত্য বলে। তো সত্য বলা ধর্মীয় দৃষ্টিতে যেমন ফরজ, তেমনি বুদ্ধির দিক থেকেও এক উত্তম ও অপরিহার্য মানবীয় বৈশিষ্ট্য। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য সত্যবাদিতার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম যেহেতু ‘দ্বীনে ফিতরত’ তাই এখানে সত্যবাদিতার গুরুত্ব অপরিসীম। এমনকি ‘সত্যবাদিতা ইমানের শাখা’।
মিথ্যা একটি ব্যাধি। এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিথ্যার পরিণাম সম্পর্কেও অনেক হাদিস বলেছেন। একটি হাদিসে তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মিথ্যা থেকে দূরে থাকো, কারণ মিথ্যা ইমানের পরিপন্থী’ (আলমুসান্নাফ, ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ২৬১১৫)।
আরো একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনের মধ্যে স্বভাবগত বিভিন্ন দোষত্রুটি থাকতে পারে। তবে সে মিথ্যুক ও প্রতারক হতে পারে না। (আলমুসান্নাফ, ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩০৯৭৫)।
মিথ্যা ইসলামের দৃষ্টিতে অতি গর্হিত, অবশ্য-বর্জনীয়। মিথ্যাবাদিতা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মিথ্যাবাদীর শাস্তির কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের হৃদয়ে আছে একটি রোগ, আল্লাহ সে রোগ আরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর যে মিথ্যা তারা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ ওদের যখন বলা হয়, তোমরা পৃথিবীতে অনাচার করো না, তারা বলে, আমরা তো শান্তি স্থাপনকারী। জেনে রাখো, ওরাই অনাচার বিস্তারকারী, কিন্তু ওদের চেতনা নেই’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০-১২)।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘ইমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো আর সঠিক কথা বলো’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৭০)।
মিথ্যা বলার কারণে সমাজে কপটতার প্রসার হয়। কেননা সব ধরনের কপটতার উৎস হলো মিথ্যাবাদিতা। বহু অপরাধের সঙ্গে মিথ্যাবাদিতা জড়িত। যেমন—খেয়ানত, গুজব ছড়ানো, মাপে কম দেওয়া, চুক্তি ভঙ্গ করা ইত্যাদি। একটি মিথ্যা অনেক মিথ্যার জন্ম দেয়। একটি মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করতে আরো অনেক মিথ্যা কথা বলতে হয়। যারা মিথ্যা কথা বলে তারা অন্যদেরও মিথ্যাবাদী মনে করে। ফলে সমাজে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়। এমনকি মিথ্যাবাদীরা নিজেদের ওপর থেকেও আস্থা হারিয়ে ফেলে। মিথ্যাবাদীরা সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। মিথ্যাবাদীদের দায়িত্বজ্ঞান লোপ পায়। মিথ্যাবাদীদের সমাজে কোনো সম্মান থাকে না। তাই তারা নির্লজ্জের মতো যেকোনো ধরনের কাজে লিপ্ত হয়। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। সর্বোপরি মিথ্যাবাদীরা আল্লাহর রহমত ও হেদায়েত থেকে বঞ্চিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মিথ্যাবাদী, অবিশ্বাসীকে সত্পথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা : যুমার, আয়াত : ৩) আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সদা সত্য কথা বলার এবং মিথ্যা থেকে বেচে থাকার তাওফিক দিন। আমিন।