অগ্রবাণী ডেস্ক | ২৭ জুন ২০১৭ | ৭:৫২ অপরাহ্ণ
ঈদের দ্বিতীয় দিনে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছে নানা বয়সী মানুষ। তবে আনন্দ পেতে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
রাজধানীর হাতিরঝিল, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে ছিলো মানুষের ভিড়। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ ভিড় জমিয়েছেন রাজধানীর নিকটবর্তী গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে, আশুলিয়া এলাকার ফেন্টাসী কিংডম, নন্দন পার্ক এবং নরসিংদী এলাকায় স্থাপিত ড্রিম হলিডে পার্কে। গতকাল ঈদের দিনও বিনোদনপ্রেমি মানুষের ব্যাপক সমাগম ছিলো বিনোদন কেন্দ্রেগুলোতে। ঈদের আনন্দকে আরো উপভোগ্য করতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন তাদের পছন্দের বিনোদন কেন্দ্র যমুনা ফিউচার পার্কে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই শাহবাগের কেন্দ্রীয় শিশুপার্কে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নামে। শিশুদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পার্কটি। বিভিন্ন রাইডে চড়ে আনন্দে মেতে ওঠে তারা। তবে মিনি ট্রেন ও ঘোড়ায় চড়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে। গরমেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পছন্দের রাইডে চড়তে আর কীসেরই বা কষ্ট কোমলমতি শিশুদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তারা ক্লান্তিহীন। মা-বাবাও সন্তানদের আবদার মিটিয়ে যাচ্ছে।
রাজধানীর বাসাবো থেকে বাবার সঙ্গে শিশুপার্কে ঘুরতে এসেছে ত্বহা বিন আসাদ ও ফাতিহা বিনতে আসাদ। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শিশু ত্বহা-বিন আসাদ বলে, ‘আব্বুর সাথে শিশুপার্কে এসেছি। খুবই মজা লাগছে। ঘোড়ায় চড়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। দুই ঘণ্টা হয়ে গেল। এখনো উঠতে পারিনি।’ তবু বিরক্তির কোনো ছাপ নেই্ তার চোখেমুখে।
এ বিষয়ে দুই শিশুর বাবা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘চাকরির কারণে সময় পাই না। তাই ঈদের ছুটিতে দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এলাম।’
অপরদিকে তিন বছরের তওসীদ ও চার বছরের বায়েজীদকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মগবাজারের বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম। একজনকে কাঁধে নিয়ে আরেকজনকে হাত দিয়ে ধরে ঘুরে দেখাচ্ছেন। রাইডে চড়ার জন্য দুই শিশু বায়না ধরলেও লম্বা লাইনের কারণে তা পূরণ করতে পারছেন না তিনি। চার বছরের শিশু বায়েজীদ অস্ফূট উচ্চারণে বলে, ‘যেটা লাফাইতে থাকে, সেখানে উঠব।’
মুগদা এলাকার বাসিন্দা দুলাল আহমেদ ভূইয়া বলেন, ‘প্রতিদিন তো কর্মব্যস্ত থাকতে হয়। মেয়েকে নিয়ে বের হতে পারি না। ঈদের পরে মেয়ের পরীক্ষা। তাই এবারের ঈদে বাড়ি যাইনি। এ কারণে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি।’
এদিকে, প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে হাতিরঝিলে হাজারো মানুষের ঢল নামে। কুড়িল বিশ্বরোড ও হানিফ ফ্লাইওভারও যেন বিনোদনের অংশ হিসেবে পরিণত হয়।
একইচিত্র দেখা যায়,শ্যামলী শিশুমেলা, জাতীয় চিড়িয়াখানা, বিমান বাহিনীর জাদুঘর, সংসদ ভবন চত্বর, রাজধানীর হাতিরঝিল, মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেন, সায়েদাবাদের ওয়ান্ডারল্যান্ড, ধানমণ্ডি লেক, শেরে বাংলানগরের ক্রিসেন্ট লেক, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, চন্দ্রিমা উদ্যানে।
শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও বয়োবৃদ্ধ সবাই ছুটির আমেজে। অনেকেই সপরিবারে বেড়াতে বের হন। মিরপুর চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারগুলোয় সকাল ১০টার আগেই থেকে দর্শনার্থীদের লাইন শুরু হয়ে যায়। বিনোদন প্রত্যাশীরা দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে টিকেট কাটেন।
ঈদ আনন্দ যেন উপচে পড়েছে রাজধানীর হাতিরঝিলে। রাজধানীবাসীর ঘুরতে যাওয়ার পছন্দের অন্যতম স্থান এখন হাতিরঝিল। তাই সকাল থেকেই নগরবাসীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে আজ হাতিরঝিল। বিনোদনপ্রেমী মানুষ উপভোগ করছেন হাতিরঝিলের সৌন্দর্য। গতকালের মতো আজো বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিলে বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যা। বাড়তে থাকে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির উৎসব। ঈদ উপলক্ষে হাতিরঝিলও সেজেছে নতুন সাজে। নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয় চক্রাকার বাস, ওয়াটার বোট। তাই পরিচ্ছন্ন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে আকর্ষণ করে ঈদমুখর মানুষকে। সন্ধ্যা হতে হাতিরঝিল সাজে রঙিন রূপে। চোখ ধাঁধাঁনো রঙিন আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরো হাতিরঝিল। রঙবেরংয়ের দৃষ্টিনন্দন বাতি হাতিরঝিলকে এনে দেয় নজরকাড়া সৌন্দর্য। ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় হাতিরঝিলের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল ও সন্দেহভাজন গাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এ ছাড়া রাজধানীর শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানায়ও অসংখ্য মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের রেঞ্জার মো. মোতালেব হোসেন বাসস’কে জানান, ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। দুপুর নাগাদ এ সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, পাঁচটি ভাগে বিভক্ত সাফারি পার্কের একটি অংশ কোর সাফারি পার্ক, যাতে বাঘ, সিংহ, ভালুক, হরিণ, জেব্রা, জিরাফ, হাতি ইত্যাদি আলাদা আলাদা সীমানা প্রাচীরের ভেতর উন্মুক্তভাবে বিচরণ করে। এসব প্রাণী দেখতে নির্ধারিত ফি দিয়ে দর্শনার্থীদের পার্কের নির্ধারিত মিনিবাস ও গাড়িতে চড়ে যেতে হয়।
এছাড়াও বিনোদন পেতে রাজধানীর আফতাবনগরের পূর্বাংশের খোলা জায়গায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পেছনে তিনশ ফিট সড়কের পাশে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেছে।