অগ্রবাণী ডেস্ক: | ৩০ জুন ২০১৭ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ
সন্ত্রাসীরা কোনো রেস্টুরেন্ট কিংবা ব্যাংকে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে ফেলে, সিনেমা-নাটকে এ দৃশ্য অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু এ ধরনের হামলা কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার বাস্তব চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয়। ভয়াবহ ওই হামলার এক বছর পূর্ণ হবে আগামীকাল শনিবার। গত বছরের ১ জুলাই ঘটে যাওয়া ওই হামলার পরই জিম্মি সংকটের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারে দেশবাসী। আতঙ্ক ও শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা জাতি। কী হয়েছিল সেদিন?
শুক্রবার রাত ৮:৪৫: ‘আল্লাহু আকবর’ বলে হামলাকারীরা ঢাকার গুলশান এলাকার স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে প্রবেশ করে।
রাত ১০:৩০: একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় এবং গোলাগুলি শুরু হয়। এতে দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন এবং ৫০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।
রাত ১০:৩৪: জিম্মি পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জন কিরবি সংবাদ সম্মেলন করেন। কিরবি বলেন, ‘দূতাবাসের পক্ষে কাজ করা সব মার্কিন নাগরিকের দায়িত্ব আমাদের। কোনো মার্কিন নাগরিক এবং স্থানীয় কোনো কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কি না, তা নির্ধারণ করতে আমরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি।’
রাত ১১:৩০: র্যা বের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ গণমাধ্যমকে ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের আহ্বান জানান।
দিনগত রাত ১:৩০: মার্কিনভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ একটি টুইট পোস্ট করে, যাতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়।
আইএসের কথিত বার্তা সংস্থা আমাক নিউজ এই তথ্য জানিয়েছে বলে টুইটে উল্লেখ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স।
পরের দিন ভোর ৪:২০: ইতালির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, ঢাকার রেস্তোরাঁয় বন্দুকধারীদের হাতে জিম্মিদের মধ্যে ইতালির সাতজন নাগরিক আছেন।
ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, ঘটনাস্থল থেকে একজন ইতালীয় জিম্মি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা ইতালীয় পুলিশকে জানিয়েছেন, ভেতরে আরো সাতজন ইতালীয় আটকে আছেন।
ভোর ৫টা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হয়। যৌথ বাহিনীতে ছিল- সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি, নৌবাহিনীর কমান্ডো এবং বিশেষ বাহিনী সোয়াত।
সকাল ৭টা: সেনাবাহিনীর কমান্ডো ফোর্সকে জিম্মি এলাকায় মোতায়েন করা হয়।
সকাল ৭:৩০: যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়।
সকাল ৭:৪০: যৌথ অভিযানের প্রথম ১০ মিনিটে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়।
সকাল ৮:১৫: যৌথ বাহিনী ৪৫ মিনিটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
হামলায় যারা নিহত হন
গুলশান হামলায় নিহত ২০ জনের তিনজন ছিলেন বাংলাদেশি। তারা হলেন, শিল্প ব্যক্তিত্ব ইশরাত আখন্দ, ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ হোসেন এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তরুণী অবিন্তা কবির।
এছাড়া ওই হামলায় ৯ জন ইতালীয় নাগরিক নিহত হন। তারা হলেন, স্টুডিওটেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদিয়া বেনেদেত্তি, ক্লাউদিয়া কাপেল্লি, ভিনচেনসো দালেস্ত্রো, ফেডো ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্লাউদিয়া মারিয়া ডি দান্তোনা, অন্তঃসত্ত্বা সিমোনা মোনতি, আদেলে পুলিজি, ক্রিস্টিয়ান রোজি, মারিয়া রিবোলি এবং মারকো তোসদাত।
হলি আর্টিজানের হামলায় তারুশি জৈন নামে এক ভারতীয় নাগরিকও নিহত হন। ভয়াবহ ওই হামলায় দুই নারীসহ সাতজন জাপানি নাগরিক নিহত হন, যাদের মধ্যে ছয়জনই মেট্রোরেল প্রকল্পের সমীক্ষা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
তারা হলেন, তানাকা হিরোশি, ওগাসাওয়ারা, শাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই ও হাশিমাতো হিদেইকো।