অনলাইন ডেস্ক | ১৩ জুলাই ২০১৭ | ৯:২০ পূর্বাহ্ণ
বিভিন্ন কারণে আমরা প্রায়ই শররে ব্যথা অনুভব করি। এর মধ্যে সারাদিনের ক্লান্তিতে হাত-পায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা তো যেকোনো সময় শুরু হতে পারে। একটু বেশি হাঁটলেন শুরু হতে পারে পা ব্যথা। যেকোনো ব্যথা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমরা পেইনকিলারের শরণাপন্ন হয়ে থাকি। কিন্তু সবসময় ব্যথানাশক বড়ি খাওয়া যে শরীরের জন্য ভালো না সেটা এখন অজানা নয়। এই পেইনকিলার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তাই ওষুধের পরিবর্তে খেতে পারেন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান। যা আপনার ব্যথা কমিয়ে দেবে। আর এই উপাদানগুলো আপনার রান্নাঘরে পাওয়া যাবে-
চেরি: এই ফলের ব্যথানাশক গুণ সম্পর্কে হয়ত অনেকেই জানেন না। এতে থাকে ‘অ্যান্থোসায়ানিনস’ নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান যা জ্বালাপোড়া ও ব্যথা সারাতে সাহায্য করে। তবে একবারে একমুঠের বেশি খাওয়া যাবে না।
হলুদ: প্রাকৃতিকভাবে ব্যথা কমাতে হলুদ বেশ উপকারী। এর অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ব্যথা কমিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, হলুদে থাকা উপাদান অস্টিওআর্থারাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।‘কারকিউমিন’ নামক উপদানের কারণে এই মসলার রং হলুদ হয়। এতে থাকে প্রদাহরোধী উপাদান যার কার্যকারিতা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের সমতুল্য। হাড়ের জোড়, মাংসপেশির ব্যথা ও ফুলে যাওয়া সারাতে হলুদ অত্যন্ত উপকারী। দুধ কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বেশি উপকার মিলবে।
আদা: এতেও আছে প্রদাহরোধী উপাদান যা বাতের ব্যথা, পেট ব্যথা, বুক ব্যথা, মাসিকের ব্যথা এবং মাংসপেশির ব্যথা সারাতে সহায়ক। গরম পানিতে আদা কুচি দিয়ে জ্বাল দিন। এটি বরফের ছাঁচে ঢেলে দিন। তারপর আদা পানির বরফ সারাদিন খান। এটি পেটের ব্যথা কমিয়ে দিবে। গর্ভকালীন সময় অথবা সার্জারির পর আদা বেশ কার্যকর।
রসুন
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ছয় কোয়া রসুন কুচি মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে দিনে দুইবার কুলকুচি করুন। দেখবেন গলা ব্যথা গায়েব হয়ে গেছে। রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান ব্যথানাশক। তা ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয়।
লবঙ্গ
মাথাব্যথা ও দাঁতে ব্যথা কমাতে লবঙ্গ খুবই উপকারী। মাথাব্যথা কমাতে তাওয়ার মধ্যে কিছু লবঙ্গ গরম করে নিন। গরম লবঙ্গ একটি রুমালের মধ্যে নিন। এক মিনিট এর ঘ্রাণ নিন এবং দেখুন মাথা ব্যথা চলে গেছে।
লাল আঙুর: এতে আছে ‘রেসভেরাট্রল’ নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যে কারণে ফলটির রং লালচে হয়। হাড়ের জোড় ও মেরুদণ্ডের ব্যথা সারাতে কার্যকর এই উপাদান। এটাও খেতে হবে একমুঠ পরিমাণ।
অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার
এক গ্লাস পানিতে এক চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিয়মিত পান করুন। এটি বুক জ্বালাপোড়া দূর করে বুক ব্যথা কমিয়ে দেয়।
পুদিনা
দাঁত, গাঁট, মাথা আর পেশির ব্যথা কমাতে পুদিনার রস অনেকেই খেয়ে থাকেন। ব্যথা কমানোর পাশাপাশি ত্বকের সমস্যা বা পেট-ফাঁপা কমাতেও ব্যবহার করতে পারেন।
পিপারমিন্ট: ভেষজ গুণের জন্য পরিচিতি আছে মেনথলের। মাংসপেশি, দাঁত, মাথা ও স্নায়ুজনীত ব্যথার চিকিৎসায় কার্যকর। মন-মেজাজও ঠাণ্ডা করে এটি। মেনথল বা পুদিনাপাতা চিবিয়ে খেতে পারেন।
লবণ: ১০ থেকে ১৫ টেবিল-চামচ বা এক কাপ লবণ এক বালতি পানিতে গুলে ১৫ মিনিট গোসল করতে হবে। এতে শরীরের কোষ থেকে পানি বেরিয়ে যাবে ফলে ব্যথা কমবে।
ওটস
নিয়মিত ওটস খেতে পারলে মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্প আর তলপেটের ব্যথা কমে। ওটস-এ প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এই উপাদান ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ফিশ অয়েল
ফিশ অয়েল অ্যান্টি ইনফ্লামেটরী উপাদানসমৃদ্ধ। গবেষণায় দেখা যে যেসব ঘাড় এবং পিঠের ব্যথার রোগীদের দিনে ১২০০ মিলিগ্রাম ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টারি খাওয়ানো হয়েছে তাদের অর্ধেক বেশি রোগীরা পেইনকিলার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
আনারস
এতে প্রচুর পরিমাণে ব্রোমেলেইন আছে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ানোর পাশাপাশি পেশিতে ক্র্যাম্প বা টান ধরা আর প্রদাহ কমায়। বিশেষ করে, ইনফ্লমেটরি ডিজিজ আর্থ্রাইটিস-এর ব্যথা কমাতে ও বাড়তি মেদ ঝরাতে বা পেট-ফাঁপা কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে।
সয়া: ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই)’য়ের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, সয়া’তে থাকা আমিষ- বাতের ব্যথা ও অস্টিওপোরোসিসের উপসর্গ থেকে রক্ষা করে। সয়া’তে থাকে ‘আইসোফ্লাভনেস’, যা প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে সুপরিচিত। এজন্য পান করুন সয়ার দুধ।
দই: শরীরের ফোলাভাব, প্রদাহ ও ব্যথা সারাতে দই বেশ উপাকারী। দইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া হজমে সহায়তা করে এবং তলপেটের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। খেতে হবে বাটি ভরে।
ঝালমরিচ: এতে থাকা ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক সক্রিয় উপাদান অসংখ্য ব্যথানাশক ক্রিমের অন্যতম উপাদান। এটি স্নায়ুর প্রান্তগুলোকে আরাম দেয় এবং ব্যথা তৈরির রাসায়নিক উপাদান গ্রাস করে ফেলে। খাবারে কিংবা সুপের মধ্যে আধা চা-চামচ ঝালমরিচ মিশিয়ে খেতে হবে।
কফি: এতে আছে ক্যাফেইন, যা ব্যথার মাত্রা কমায়। পাশাপাশি অন্যান্য ব্যথানাশকের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তবে নিয়মিত কফি খাওয়া অভ্যাস থাকলে শরীরে কফির ব্যথানাশক গুণ কাজ নাও করতে পারে।