ডেস্ক | ২০ মার্চ ২০২০ | ৮:১০ অপরাহ্ণ
ইউরোপের দেশ ইতালিতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিনিয়ত মৃতের তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। যে চীন থেকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে সেখানে ক্রমান্বয়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশটি।
প্রথম মৃত্যুর এক মাস না পেরোতেই ইতালিতে মৃতের সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। অথচ ইউরোপের দেশটিতে প্রথম মৃত্যু হয়েছিল চীনে মৃত্যুর দেড় মাসের বেশি সময় পর।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন তিন হাজার ২৪৫ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৯২৮ জন। সংক্রমণ শুরুর প্রায় দুই মাস পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রবেশ করে প্রাণঘাতী করোনা। এরপর মাত্র একমাসের মধ্যেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৪২৭ জন মারা গেছে। এ নিয়ে মোট ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো তিন হাজার ৪০৫ জনে। এখন পর্যন্ত কোনো দেশে করোনায় এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৩২২ জন। মোট আক্রান্ত ৪১ হাজার ৩৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪ হাজার ৪৪০ জন।
ইতালির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইতালিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত তিনদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। করোনাভাইরাসে চীনের পর বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ইতালি।
এদিকে করোনাভাইরাসে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে লোম্বারদিয়া অঞ্চলে। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে মৃত্যুবরণ করেছে ২০৯ জন। চীনের মেডিকেল টিমের দ্বিতীয় দল লোম্বারদিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৃহস্পতিবার চীনের চিকিৎসক দলের প্রধান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এখনো অপ্রয়োজনে প্রচুর লোক বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। এছাড়া পাবলিক পরিবহনগুলোও প্রচুর সংখ্যায় চলাচল করছে। এগুলো পুরো লকডাউন করে দিতে হবে। আমরা চীনের উহানেও কাজ করেছি, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র সাধারণ জনগণকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করে। এখানেও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে। লোকজনকে ঘরে থাকতে হবে। সবাই মিলে কাজ করলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
লোম্বারদিয়ার প্রেসিডেন্ট ফোন্টানা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনি লোম্বারদিয়া অঞ্চল পাবলিক অফিস এবং কনস্ট্রাকশনের কাজ বন্দের ঘোষণা দেন। এদিকে লোম্বারদিয়ার বেরগামো এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। বেরগামো এখন মৃত্যুপুরী। চারিদিকে শুধু লাশের গন্ধ। হাসপাতালের মর্গে লাশ রাখার জায়গা নেই। কবরস্থানগুলোতেও একই অবস্থা। বেরগামো থেকে দেশটির সেনা সদস্যরা করোনায় আক্রান্তে মরদেহ অন্য শহরের কবরস্থানগুলোতে দাফন করছে।
বুধবার ইতালির রাষ্ট্রপতি সেরজো মাতারেল্লা বেরগামোর মেয়রের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সান্ত্বনা দেন এবং ধৈর্য ধারন করতে বলেন।