মোঃ তাইজুল ইসলাম টিটন: | ২৭ জুলাই ২০১৭ | ৩:৩১ অপরাহ্ণ
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে এলাকাবাসি। ইতিমধ্যে কাশিয়ানীর প্রায় দশটি খাল ও রাস্তার খাঁদ বে-দখল হয়ে গেছে। যার প্রেক্ষিতে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। জন জীবন হুমকির সম্মুখীন।
সরেজমিন তদস্ত করে জানাগেছে, মধুমতি নদী থেকে ভাটিয়াপাড়া স্লুইচগেট দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পলিমাটিসহ পানি নেমে যেত পূর্ব দিকের মাঠে। বিল পবনিয়া (বড়বিল) ও সাইল্টার বিল হয়ে পূর্ব দিকের মাঠে পলি জমতো। উর্ব্বর হতো বিস্তৃর্ণ অঞ্চল। উপজেলার কুসুমদিয়ার খাল হয়ে সেই পানি নেমে যেত রামদিয়া ওয়াপদা খালে। ভাটিয়াপাড়ার সেই খালটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা। সেই খালের মধ্যে তৈরী করা হয়েছে নানা স্থাপণা। ভাটিয়াপাড়া থেকে কালনা ঘাট পর্যন্ত রাস্তার মাঝে যে কালর্ভাট তা বন্ধ করা হয়েছে। তারপর কোন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মান না করেই রাস্তা নির্মান করা হয়েছে। যার ফলে খালটি পুরোপুরি বন্ধ হয়েগেছে। এখন বর্ষা মৌসুমে ওই খাল দিয়ে কোন পানি মাঠে নামতে পারেনা।
খালপাড়ে বসবাসকারি বয়বৃদ্ধ লালমিয়া শেখ জানালেন, এই খালে বর্ষা মৌসুমে যখন পানি নামতো, তখন মাছ ধরার উৎসব হতো খালে। আর ছোট বড় অনেক নৌকা পাট বোঝাই করে আসতো খালে, সে কি এক অদ্ভুত দৃশ্য ছিল। খালটি এখন দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। তাদের বিরুদ্ধে কিছুই বলার উপায় নাই। খালটি বড়ই উপকারি ছিল। খালটি খনন করা একান্ত জরুরী।
এদিকে কাশিয়ানী সদর এলাকায় বারাসিয়া নদী থেকে বর্ষা মৌসুমে ’কুটির খাল’ দিয়ে পানি নেমে যেত বিল পবনিয়া হয়ে কুসুমদিয়া খালে। সেই খালের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যদিয়ে খালটি প্রবাহিত ছিল। বর্ষা মৌসুমে বা সবসময় খালটির মুখ খোলা থাকা একান্ত জুরুরী। এলাকাবাসির পয়:নিস্কাশণের জন্য খালটি বিশেষভাবে প্রয়োজন।
সম্প্রতি এলাকার কিছু অতিউৎসাহি মানুষ খালটি বন্ধের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নতুন রেল লাইন তৈরী করতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ খালের একটি অংশ বন্ধ করে দিয়েছে। রেল লাইন থেকে দক্ষিণ দিকে খালপাড়ে যারা বসবাস করেন তারা নিজ উদ্যোগে প্রত্যেকের বাড়ির সামনের অংশ মাটি ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। কাশিয়ানী শহরের পানি নিস্কাশণের সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। কাশিয়ানী শহর তলিয়ে যাবে। এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে কাশিয়ানীবাসিকে রক্ষা করতে এখনই খালটি দখলমুক্ত করা একান্ত জরুরী। প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে গভীর সংকটে পড়বে এলাকাবাসি।
দস্তন থেকে জয়নগর বাজার, শিবগাতী হয়ে তেঁঘুরিয়া পর্যন্ত ‘শিবগাতী খাল’ সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে। যেই খাল দিয়ে একসময় বড়বড় নৌকা চলতো, এখন আর নৌকা চলেনা। সড়ইডাঙ্গা বিল থেকে প্রবাহিত রসের খালের অস্থিত্ব থাকলেও সংস্কারের অভাবে ভরাট হয়ে গেছে। কাগদি বিল থেকে হিরণ্যকান্দি, ছোটখারকান্দি হয়ে তেঁঘুরিয়া পর্যন্ত নেমে আসা ঝাউতলার খাল পুরোপুরি বে-দখল হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে কাগদি বিল থেকে মাজড়া হয়ে বিল পবনীয়া পর্যন্ত নেমে আসা বাবুখালী। এসব খাল সংস্কার বা দখলমুক্ত না করা গেলে একসময় পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
রামদিয়া বাজার এলাকায় খাল দখল করে দোকান ও বাড়ি তৈরীর প্রতিযোগিতায় নেমেছে ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ইতিমধ্যে রামদিয়া বাজার এলাকায় ওয়াপদা খালের অর্ধেকটা দখল হয়েগেছে। দখলকারিদের উচ্ছেদ করার কেউ নাই। স্থানীয় প্রশাসন বা ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ খাল দখল নিয়ে কোন কথা বলেনা। সাধারণ জনগন এবিষয়ে কোন অভিযোগ করলে প্রভাবশালী দখলদাররা তা ধামাচাপা দিয়ে দেয়। সরাসরি খাল দখল নিয়ে কোন অভিযোগ করতে পারেনা প্রভাবশালী দখলদারদের ভয়ে। এছাড়া মাজড়া বাবুখালীসহ এলাকার রাস্তার পাশ দিয়ে পানি নিস্কাশণের জন্য রাস্তার খাঁদ নামে যেসব খাল ছিল তার অধিকাংশই বে-দখল হয়েগেছে। উপজেলার এইসব খাল দখলমুক্ত করা একান্ত জরুরী। সাধারণ জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরী বলে মনে করেন।