অগ্রবাণী ডেস্ক | ৩১ জুলাই ২০১৭ | ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ
বগুড়ায় ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভন দেখিয়ে এক কিশোরীকে ধর্ষণ ও পরে মাসহ তাকে ন্যাড়া করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শ্রমিক লীগ তুফান সরকারের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় প্রধান আসামি তুফানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এরইমধ্যে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফুঁসে উঠেছে মানুষ। অনেকেরই প্রশ্ন- কে এই তুফান সরকার?
অনুসন্ধানে জানা যায়, বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর কসাইপাড়া এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী মজিবর রহমান সরকারের আট ছেলের মধ্যে সবার ছোট তুফান সরকার। ২৪ বছর বয়সী তুফান পারিবারিকভাবে চমড়া ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার বড় ভাই যুবলীগ নেতা মতিন সরকারের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
বড় ভাই আব্দুল মতিন বগুড়া শহর যুবলীগের যুগ্মসম্পাদক হওয়ায় রাজনীতিতে তুফান সরকারের দ্রুত উত্থান ঘটে। এক সময় তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তিনি একটি বাহিনীও গড়ে তোলেন। মাদকের টাকায় তিনি দ্রুত ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যান।
২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তুফানকে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেড়িয়ে আসেন। একই বছরের ২০ জুলাই একটি হত্যা চেষ্টা মামলায় তুফান এবং তার তিন ভাই ঝুমুর, ওমর ও সোহাগ গ্রেফতার হয়। তবে কোনো বারই তাদের বেশি দিন জেলে কাটাতে হয়নি।
ফলে তুফানের বেগেই যাবতীয় কুকর্ম অব্যাহত রাখেন তুফান সরকার। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইমরান হোসেন নামে প্রতিবেশী এক যুবদল নেতা খুন হন। ইমরানের মা তার ছেলে হত্যাকাণ্ডে তুফান ও তার ভাইদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।
ইমরানের মা তখন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, মতিন এবং তার ভাইদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ‘একই সন্ত্রাসীরা খোকন নামে তার আরো এক ছেলেকে হত্যার চেষ্টা চালায়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ নেয়নি।’
আক্ষেপ করে ইমরানের মা বলেন, ‘পুলিশ কখনোই এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। যদি নিত তাহলে ইমরানকে মরতে হতো না।’
একাধিক মামলার আসামি তুফান সরকার এক সময় জাতীয় শ্রমিক লীগে যোগদান করেন। তাকে ওই সংগঠনের বগুড়া শহর শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তিনি সংগঠনের ওই পদবি ব্যবহার করে শহরে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশা-ভ্যান মালিক সমিতির নেতৃত্ব নেন। প্রতিটি রিকশা মালিককে সমিতিতে ভর্তি বাধ্যতামূলক করে তাদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ এক বছরের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। সেই হিসাবে বগুড়া শহরে চলাচলকারী ১০ হাজার রিকশা-ভ্যান থেকে এক বছরেই আয় হয় ২০ কোটি টাকা।
এছাড়া সমিতির প্রতিটি রিকশা-ভ্যান থেকে তার সমিতির নামে ২০ টাকা করে প্রতিদিন ২ লাখ টাকা করে বছরে আরো ২৪ লাখ টাকা আদায় করা হয়। ভর্তি এবং চাঁদার নামে তোলা এই অর্থের ভাগ আজ পর্যন্ত কোনো রিকশা-ভ্যান মালিককে দেওয়া হয়নি। বরং চাঁদাবাজির পুরো টাকা তুফান ও তার সহযোগীরাই ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন।
এভাবে প্রায় দুই বছর চলার পর কয়েক মাস আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বগুড়া সফরকালে চাঁবাবাজি বন্ধের নির্দেশ দিলে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ততদিনে তুফান কোটিপতি বনে যান।
সম্প্রতি তিনি নিজ এলাকায় প্রাসাদতুল্য বাড়ি নির্মাণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘তুফান বাহিনী’র প্রধান তুফানের বিরুদ্ধে শহরের বিভিন্ন স্থানে জায়গা-জমি এবং দোকান-পাট দখলেরও বহু অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৩ মাস আগে তিনি ক্যাডার বাহিনী নিয়ে শহরের তালুকদার মার্কেটে জনৈক রাজা মিয়া নামে এক ব্যক্তির দোকান দখল করে এক ব্যক্তিকে সেখানে বসিয়ে দেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তুফানের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। তবে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় ফেঁসে যাওয়ার পর পুলিশ তুফানের অপরাধ জগতের খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, তুফানের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা এবং মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আরো মামলা আছে কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে।