
| বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট
শিক্ষা আমাদের জন্মগত অধিকার। বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমাদের উচ্চ মাধ্যেমিক প্রর্যন্ত বিনামূল্যে সকল শিক্ষার ভার বহন করবে সরকার। আমার আলোচনার বিষয় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কোচিং এর অত্যধিক দৌরাত্ম্য। সরকার আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকার এবং সাক্ষর করেছেন এই মর্মে যে, বাৎসরির জিপিটির শতকরা ছয় শতাংশ ব্যায় করবে শিক্ষাখাতে। অথচ বিভিন্ন তথ্যমতে আমরা এর বেশ ঘটতি দেখছি, সরকার জিডিপির শতকরা ছয় শতাংশ ব্যায় করার কথা বললেও সরকার দুই শতাংশের কম ব্যায় করছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ এবং শিক্ষার মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এবং আন্তার্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কেন পরিসংখ্যান তালিকার হাজারের পরে সে নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের এসব নিয়ে প্রশ্ন করার আগে দেখা উচিত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হয় ততোটুক। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে কি করছে, গতানুগতিক চাকরির পেছনে ছুটছে নাকি গবেষণা করছে। হ্যাঁ, এই চাকরি আমাদের প্রয়োজন, আমাদের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতকরা আশিভাগ শিক্ষার্থীরা নিন্ম মধ্যেবিত্ত পরিবারের সন্তান। মুটামুটি একটা চাকরি হলে ব্যাস।
আমাদের যথেষ্ঠ মেধাশক্তি আছে। তবে, কেন আমাদের তেমন বেশি বিজ্ঞানী নেই? কেন উদ্ভাবক নেই? কেন গবেষক নেই? এর সিংহভাগ দায় সরকারকে দিতে চাই। যেহেতু একজন শিক্ষার্থীকে কেবল মাস্টার্স প্রর্যন্ত পড়াশুনার জন্য দশ থেকে বিশ লাখ টাকা খরচ করতর হয়, তারপর কীভাবে সে গবেষণা করবে? তার পিতা-মাতা হয়তো কেবল পড়াশোনার জন্য জায়গাজমি বিক্রি করতে পারেন, গবেষণা, বা উদ্ভাবন করার জন্য তো তারা ইনভেস্ট করবেন না। এতে তাদের নগত কোনো লাভ নেই। ছেলে-মেয়ে মুটামুটি লেখাপড়া করে, একটা চারকি নিয়ে বিয়েশাদি করলেই আমাদের বাবা-মারা বেজায় খুশি।
মানবজীবন তো কেবল নিজে বা নিজের পরিবার আত্মীয়স্বজন নিয়ে নয়। একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থীর কাছে সকল নাগরিকের অধিকার রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী যেহেতু সরকারী সার্টিফিকেট গ্রহণ করে, সেহেতু সে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের দেয়া ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা করেছে, সকল নাগরিক তার কাছ থেকে কিছু চায়। এই চাওয়াটা প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষ। সকল নাগরিক চায় আমাদের দেশের শিক্ষিত সন্তানেরা বিশ্ব জয় করুক, অনেক কিছু আবিষ্কার করুক, উদ্ভাবন করুক, গবেষণা করুক। এটাই সম্মিলিত নাগরিকের চাওয়া।
আমার আলাপের বিষয়টি ছিলো, শিক্ষায় কোচিং এর দৌরাত্ম্য। আমি, আপনি, সে সবাই আমরা নিজেরা, নিজেদের সন্তানদের মুটামুটি কোনো ইস্কুলে ভর্তি করেই, দৌড় দি কোচিং মাস্টারের কাছে এবং জিপিএ ফাইভ বা প্রথম স্থান অধিকার করার ব্যপারটা কোচিং মাস্টারের উপরে ছেড়ে দি। শিক্ষায় এই কোচিং বিষয়টা এমনভাবে জড়িয়েছে এর একটা উদহারণ দিলে ব্যপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে, আমরা জানি, বর্তমানে সরকারী যেকোনো চাকরিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুস! মানে তৈল মারতে হয় উপরস্ত কর্মকর্তা স্যারদের। এখন এক ব্যক্তি দশ লাখ টাকা ঘুস দিয়ে পুলিশের চাকরি নিলো। চাকরি হবার পর তার বেতন হলো দশ হাজার। পুলিশের চাকরি কোনো বড়লোক পরিবারের সন্তান নেন না। মধ্যেবিত্ত বা নিম্ন মধ্যেবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পুলিশের চাকরি নেন। তো একজন নিম্ন-মধ্যেবিত্ত পরিবার এক সঙ্গে দশ লাখ টাকা দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। তাহলে কি করে, ধার করে, লোন নেয়। এবং চাকরি নেয়ার পর, সেই চাকর যে ঘুস দিয়ে চাকরি নিয়েছে তা দুই এক বছরের মধ্যে উঠানোর পণ করেন। এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুস তাকে বিভিন্ন উপায়ে গ্রহণ করতে হয়। এটা কিন্তু তার দোষ না, এটাই সিস্টেম হয়ে গ্যাছে।
শিক্ষা অর্জন ব্যপারটা প্রায় তেমন, যে অমুকের ছেলে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে, আমার ছেলেকেও পেতে হবে, সেটা যেকোনো উপায়ে হোক। এবং এই আসা থেকে আমাদের অভিভাবগণ তাদের ছেলে-মেয়েদের কোচিং মাস্টারের কাছে ছেড়ে দেন।
এখন ঘটনা হচ্ছে, এই কোচিং কারা করান? অর্থাৎ এই কোচিং শিক্ষক কারা? এর সহজ উত্তর যারাই ক্লাসরুমে হাজিরা এবং ছোটছোট বাচ্চাদের মুখ দেখবার জন্য সকালবেলা যে, মাস্টাররা ইস্কুলে যান, তারাই বিকেল এবং রাত্রে বেলায় তাদেরই ছাত্রদের বিশেষ ক্লাস মানে কোচিং করান।
কোচিং করাতে সর্বনিম্ন পাঁচশো টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা প্রর্যন্ত দিতে হয় এই কোচিং শিক্ষকদের। অর্থাৎ অভিভাবকরা শিক্ষকদের দুইভাবে টাকা দেন তাদের ছেলে-মেয়েদের জিপিএ ফাইভ পাওয়ার জন্য প্রথমটা হচ্ছে, শিক্ষকদের সরকারী বেতন। যেহেতু অভিভাবকরা সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে থাকেন এবং সরকার সেটাই গুলিয়ে এলিয়ে শিক্ষকের বেতর দেন। এবং শিক্ষকের দ্বিতীয় বেতন হচ্ছে, অভিভাবকদের নগদ নেয় কোচিং ফি।
আমাদের দেশে যে হারে কোচিং এবং বেসরকারি ইস্কুল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য ব্যর্থ হবে খুব তারাতারি যদিও অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছে। সৃজনশীল শিক্ষার্থীর অভাবে পড়বে রাষ্ট্র ও সমাজ। যদিও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা উচ্চ-মাধ্যেমিক প্রর্যন্ত সৃজনশীল পদ্ধতি।
মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস দমনের ন্যয় কোচিং ব্যবসা এখন এই মুহূর্ত বন্ধ করতে না পারলে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা গতানুগতিক ক.খ এবং এ.বি.সি.ডি-ই বলবে। সৃজনশীলতা হারিয়ে যাবে।
সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ে কাছে অনুরোধ, অতিদ্রুত বাংলাদেশের সকল ইস্কুল, কলেজ ভিত্তিক কোচিংগুলো বন্ধার ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ। এবং বেসরকারি ইস্কুল ও কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরো অধিক নজরদারি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ।
Posted ৫:০০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৯ জানুয়ারি ২০২০
ajkerograbani.com | shalauddin Razzak
.
.
Archive Calendar