অগ্রবাণী ডেস্ক | ২০ জুন ২০১৭ | ৮:০৩ অপরাহ্ণ
খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠছিল টুকটাক। কড়া শাস্তিও হচ্ছিল বিসিবির দৃঢ়তায়। এবার অভিযোগ কোচের বিরুদ্ধে, সেটিও যৌন হয়রানির মত স্পর্শকাতর বিষয়ে। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি তাই বেশ বিব্রতই। খালেদ মাহমুদ সুজনের কথাতেও বেরিয়ে এল বিসিবির বিব্রত হওয়ার বিষয়টি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য ও বিসিবির কোচ আবু সামাদ মিঠুর বিরুদ্ধে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী ক্রিকেটারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। শ্লীলতাহানির অভিযোগে ওই কিশোরীর বাবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের কাছ কোচের শাস্তি চেয়ে আবেদন করেছেন। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিসিবিও।
গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ধরণের অভিযোগ শুনলে আমরা প্রচণ্ড বিব্রত হই। সত্য-মিথ্যা জানি না, তবে এ ধরনের অভিযোগ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য খুবই বিব্রতকর। বিসিবি এটির তদন্ত করবে। ঈদের পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তদন্তের আগেই অবশ্য সেই কোচকে সাময়িক নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল বিসিবি। তবে সেটি নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেই ব্যবস্থা নেবে বলে ঠিক করে। খালেদ মাহমুদ বললেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেয়া যায় কিনা সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। যেটি নিয়মের মধ্যে না পড়ায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
হয়রানির শিকার কিশোরীর বাবা গত ১৪ জুন জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তাতে বলা হয়, তার মেয়ে দিনাজপুর বড় মাঠে কোচ আবু সামাদ মিঠুর অধীনে ক্রিকেট অনুশীলন করে আসছে দীর্ঘদিন। তার মেয়ের সঙ্গে আরো অনেক মেয়েই ওই মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করে থাকে। গত ১ জুন অনুশীলনের সময় বলের আঘাতে তার মেয়ে আহত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কোচ মিঠু তাকে স্পোর্টস ভিলেজে নিয়ে আসেন। এক পর্যায়ে সঙ্গে থাকা মেয়ের বান্ধবীকে মাঠে চলে যেতে বলেন। পরে বরফ দেওয়ার নাম করে মিঠু তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।
লিখিত অভিযোগে মেয়েটির বাবা আরো বলেছেন, ‘আমার মেয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে এবং ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়, তারপরও মিঠু হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে যায়। কয়েকবার এ রকম আচরণের পর আমার মেয়ে চিৎকার করলে মিঠু তাকে রেখে পালিয়ে যায়।’
মেয়েটির বাবা লিখেছেন, ‘আমার মেয়ের বয়স মাত্র ১৫ বছর, সে নবম শ্রেণিতে পড়ে। জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী সে এখনো শিশু। ঘটনার পর আমার মেয়ে বাসায় ফিরে নীরব হয়ে যায়, খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা বন্ধ করে দেয়, মাঠে আসাও বন্ধ করে দেয়। বাবা হিসেবে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। আমার মেয়েসহ অন্য মেয়েদের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিই এর প্রতিবাদ করা দরকার।’
অভিযোগে আরও বলা হয়, নিজের মেয়ের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে তিনি অন্য মেয়েদের সঙ্গেও এই ধরনের ঘটনার অভিযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ভয়ে ও লজ্জায় এর আগে কেউ মুখ খোলেনি। অনেক মেয়ে ধীরে ধীরে মাঠে আসাই ছেড়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি কানিজ রহমান, সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম এক যৌথ বিবৃতিতে আবু সামাদ মিঠুর বিরুদ্ধে নারী ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, নিন্দা, ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। মানবিক মূল্যবোধের এই অবক্ষয় রোধ করতে মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ অপরাধীকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান।