মোঃ সেলিম রেজা: | ২৫ আগস্ট ২০১৭ | ৮:৫৩ অপরাহ্ণ
প্রত্যন্ত এলাকার শিশু শিক্ষা বিস্তারে দারিদ্রতা বড় বাধা। দরিদ্র পিতা মাতা জীবিকা নির্বাহের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। শিশুর শিক্ষার দিকে নজর দিতে পারেননা। ফলে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে ঝড়ে পড়ে। বঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় সামিল করতে বুলেট মল্লিক বাদল তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি শিশু শিক্ষা বিস্তারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। শিশুদের জন্য তিনি গোপালগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত বিল অধ্যুশিত এলাকা কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির আঙ্গীনায় হেনা শিশু কানন বিদ্যা নিকেতন নামে ১০ টি পাঠশালা গড়ে তুলেছেন। এ সব পাঠশালার শিশুদের বিনামূল্যে ব্যাগ, খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কুল পোশাকসহ শিক্ষা উপকরণ প্রদান করেন তিনি। স্কুলে নিজের পয়সায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এখানে বিনামূলে পড়ানো হচ্ছে। প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি পাঠশালা গুলোতে শিশুদের ধর্মীয়, নৈতিক শিক্ষা, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা করানো হয়।
বুলেট মল্লিক বাদল কোটালীপাড়া উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের পীড়ারবাড়ি গ্রামের সুভাষ মল্লিকের ছেলে। তিনি ২০১৩ সালে এলএলবি পাশ করেছেন। এখন ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।
শিক্ষার্থী সুজয় মল্লিক, চাঁদনী মজুমদার জানায়, প্রইমারী স্কুল ছুটির পর তারা হেনা শিশু কানন বিদ্যা নিকেতনের ড্রেস পরে পাঠশালায় আসে। এখানে বসেই তারা প্রতিদিনের স্কুলের পড়া সম্পন্ন করে। পাঠশালা থেকে তাদের ড্রেস, ব্যাগ, খাতা, পেন্সিল, কলম, চক, সিলেট বিনামূল্যে দেয়া হয়।
শিক্ষক তপু মল্লিক বলেন, বুলেট মল্লিক বাদলের পাঠশালায় দরিদ্র পরিবারের ছোট শিশুদের অক্ষর জ্ঞান দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগি করে গড়ে তোলা হয়। এ ছাড়া প্রতিদিনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণির শিশুরা স্কুল ছুটির পর এ পাঠশালায় আসে। তারা এখানে বসে স্কুলের প্রতিদিনের সব পড়া সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরে যায়। বাড়িতে গিয়ে আর তাদের পড়াশেনা করতে হয়না। পাঠশালা শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন বুলেট মল্লিক প্রদাণ করেন।
অভিভাবক সেতু মল্লিক বলেন, আমাদের এলাকার অধিকাংশ পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়ানোর সঙ্গতি আমাদের নেই। তাই ছেলে মেয়েরা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছিলোনা। অনেকেই প্রাথমিক গন্ডি পার হওয়ার আগেই ঝড়ে যাচ্ছিলো। এর মধ্যে দেড় বছর আগে বুলেট মল্লিক এলাকায় ১০ টি পাঠশালা করেছে। প্রতিটি পাঠশালায় ২৫ থেকে ৪০ জন পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এখানে শিশুরা এসে ক্লাসের পড়া সম্পন্ন করছে। গত বছর এ সব শিশুরা বিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে।
সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের ভূতেরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মীর মামুন হোসেন বলেন, বুলেট মল্লিকের পাঠশালা এলাকার শিশুদের শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা রাখছে। শিশুরা আগে প্রতিদিনের পড়া তৈরী করে স্কুলে আসত না। ওই পাঠশালার বদৌলতে শিশুরা সেখানে বসেই পড়া তৈরী করে স্কুলে আসছে। বিদ্যালয়ে ভালো করছে। গত বছরের ফাইনাল পরীক্ষায়ও তারা ভালো করেছে। ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস পেয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির শিশুদের জন্য এ পাঠশালা অব্যাহত রাখা গেলে শিশুরা আলোর পথে এগিয়ে যাবে।
পাঠশালার উদ্যোক্তা বুলেট মল্লিক বাদল বলেন, বঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় সামিল করতেই আমি পাঠশালা করার চিন্তা করি। দেড় বছর আগে আতœীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবসহ আরো অনেকের আর্থিক সহেযোগিতায় আমি স্কুল শুরু করি। এখন ১০ টি স্কুল চলছে। আরো ১৪ টি স্কুল করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এ ভালো কাজে আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। আমি নবীন আইন পেশাজীবি হিসেবে সামান্য আয় করি। এ দিয়ে স্কুল চালিয়ে যাওয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপরও আমি এ মহৎ কাজ করে যাচ্ছি। আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের মতো সমাজের হৃদয়বান মানুষ এ কাজে এগিয়ে আসলে আমার পদযাত্রা বিস্তৃত হবে। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্ম সমৃদ্ধ ও শান্তিময় জীবন গড়ে তুলবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিলাল হোসেন বলেন, নিঃস্বার্থ মানুষরাই শিক্ষা বিস্তারসহ সমাজের সব ধরনের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছেন। তাদেরই একজন তরুন সমাজ সেবক বুলেট মল্লিক বাদল। তার হাত ধরেই গ্রামের দরিদ্র শিশুরা আলোর পথযাত্রী হচ্ছে। এটি আমাদের সমাজ ও দেশের জন্য সু সংবাদ। আমি বুলেট মল্লিক বাদলকে এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।