অগ্রবাণী ডেস্ক | ০৩ জুন ২০১৭ | ১:২৮ অপরাহ্ণ
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস অনেকেরই বমি বমিভাব, মাথা ঘুরানো বা খাবারে অরুচি থাকে। ফলে খেতে না পারা আর বারবার বমির কারণে অনেকেরই ওজন কমে যাওয়ার আশংকা থাকে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস একজন গর্ভবতী নারীর রোজা না রাখাই ভালো। তাছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় মায়ের পুষ্টি ও গর্ভস্থ শিশুকে গ্লুকোজসহ অন্যান্য পুষ্টির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
অন্যদিকে গর্ভাবস্থার মাঝের তিন মাসে গর্ভবতী মায়েরা বেশ একটু ভালো বোধ করেন। এসময় সাধারণত তাদের বমি হয় না, এবং খেতেও কোন অসুবিধার সৃষ্টি হয় না। তাই এসময় আর অন্য কোন অসুস্থতা না থাকলে গর্ভবতী মা এসময় রোজা রাখতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। শেষের তিন মাসে গর্ভস্থ শিশুসহ জরায়ুর উচ্চতা বাড়ার কারনে গর্ভবতী মায়ের অসুবিধা আরও একটু বেড়ে যেতে পারে। এসময় নিঃশ্বাস ছোট আর ঘন ঘন হয়। তাছাড়াও খাবার হজম হতে দেরি হয়, গলা-বুক জ্বালাপোড়া বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিক নড়াচড়া ধীর হয়ে আসে। তবে গর্ভবতী মা যদি অস্বস্তিবোধ না করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া দাওয়া করতে পারেন, এবং সেই সাথে যদি তার শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি না হয় তবে তিনি ইচ্ছা করলেই রোজা রাখতে পারেন।
কিন্তু এখন যেহেতু গরমকাল আর রোজার সময় যেহেতু এখন প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা হয়ে গেছে, তাই গর্ভবতী মা যদি এমন দীর্ঘসময়ের রোজা রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে। সাধারণত একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে ছয়বার খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। তাই যেহেতু রোজার সময় এই খাবারের সময়ের হেরফের হয়, তাই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
সেহেরি:
সেহেরির সময় একজন গর্ভবতী মা স্বাভাবিক মানুষের খাবারের তালিকা অনুযায়ী খাবার খাবেন। তবে এসময় ক্যালরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এসময় পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমান কমে যাবার প্রবনতা এড়াতে পানি ও তরল খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে। যাদের বুক জ্বলা বা গ্যাসের সমস্যা আছে, তারা এসময় এজাতীয় খাবার পরিহার করবেন। অবশ্যই যেকোনো ফল যেমন- আম, কলা ইত্যাদি সেহরির মেন্যুতে রাখবেন। ফল ও আঁশযুক্ত খাবার ধীর গতিতে পরিপাক হয় বলে ক্ষুধা কম লাগবে। কিন্তু কখনোই সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।
ইফতার:
ইফতারে খেজুর, ফলের রস, চিঁড়া-দই ও ফল খেতে হবে। এসকল খাদ্যের দরুন রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে। দুধ ও দুধের তৈরি এসব খাবার রক্ত শূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার প্রবণতা কমায়। তাই দুধ, লাচ্ছি, মাঠাও এসময়ের পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় পড়ে। এছাড়াও তাজা ফল বা সবজির সালাদ, স্যুপ ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। ইফতারে একসাথে বেশী খাবার খাওয়া যাবে না। অল্প অল্প করে বারবার খাবার খেতে হবে। আর অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার যেমন পিয়াজু, বেগুনী পরিহার করাই ভালো।
রাতের খাবার:
রাতের খাবারে মাছ, মাংস, নানা জাতের ডাল ইত্যাদি আমিষ খাবারের সঙ্গে সবজির সুষম সমন্বয়ে রাতের খাবার খেতে হবে। ঢেকিছাঁটা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাওয়া ভালো। গুরুপাক, অতিরিক্ত তেল-ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
শুধুমাত্র একজন পরিপূর্ণ সুস্থ, যাকে তার চিকিৎসক রোজা রাখার জন্য ফিট বলে অভিহিত করেছেন, সে সকল গর্ভবতী মায়েদেরই রোজা রাখা যাবে। কিন্তু যদি কোনো গর্ভবতী মা অসুস্থতার জন্য রোজা করতে না পারেন অথবা রোজা রাখার পর যদি অসুস্থ বোধ করেন, শরীরে কাঁপুনি অনুভূত হয় বা শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে অথবা বমি করে ফেলেন এবং রোজা রাখার মতো অবস্থা না থাকে, তাহলে তিনি রোজা ভাঙ্গতে পারেন। এবং শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর থেকে ভাংতি রোজা রাখতে পারবেন।