অনলাইন ডেস্ক | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৭:২১ অপরাহ্ণ
এর আগেও বেশ ক’বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছিল তার মৃত্যুর খবর। কিন্তু পরে দেখা গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থিত নিজের দোকানে দিব্যি বসে আছেন তিনি, বানাচ্ছেন সিংগারা-সমুচা, হাত রাখছেন রুটি-পরোটায়ও।
তিনি গুরা মিয়া। ‘মউ’ (মামা) নামেই যিনি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে।
এদিন তার মৃত্যুর খবরটা মিথ্যা হলো না আর। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সত্যি সত্যি চলে গেলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রিয় ‘মউ’। বয়স হয়েছিল ৭০ এর আশেপাশে। এর মধ্যে দিয়ে যেন যতিচিহ্ন পড়ে গেল একটি অধ্যায়ের।
আগে থেকেই হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। শুক্রবার ভোরে সেটি বেড়ে গেলে তাকে তড়িঘড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সকাল সাড়ে আটটায় সেখানেই মৃত্যু হয় তার।
বাবা-মায়ের দেওয়া নাম গুরা মিয়া হলেও তাকে সবাই চিনতো ‘মউ’ নামেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে কোনদিন পা রাখেননি, ছিলেন না কোনো কর্মচারীও। বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কেউই নন। রেলস্টেশনে প্রায় ২০ হাত বাই ১০ হাতের ছোট্ট একটি খাবারের দোকান চালাতেন মাত্র। স্বাধীনতার পর থেকেই তিনি এখানে দোকান দেন। শুরু থেকেই তাকে মউ বলে সম্বোধন করতেন শিক্ষার্থীরা। এ থেকেই নিজের দোকানের নাম দেন ‘মউর দোয়ান’।
সেই দোকান চালানো সাধারণ মানুষটা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে! সেটাই হয়তো ক্যাম্পাসের বাইরের পৃথিবীর কাছে বড় প্রশ্ন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থী কিংবা বর্তমান শিক্ষার্থী, তালিকায় থাকবেন শিক্ষকরাও। মউকে চেনেন না এমন হয়তো তাদের মধ্যে কেউ নেই।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বড় উৎসব হলে তো কথাই নেই। মউর দোয়ানে বসে, মউকে সঙ্গে নিয়ে হাজারো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেরোবেই।
‘মউ’ কতটা বিখ্যাত ছিলেন তা জানার জন্য নিচের তথ্যটাই যথেষ্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের বাংলা সাহিত্য নামের একটি কোর্সের ‘কবিতা ও রম্য রচনা’ অংশে ১০ নম্বরের প্রশ্ন এসেছিল ‘মউর দোয়ান নিয়ে’। বলা হয়েছিল মউ ও দোকান নিয়ে একটি কবিতা লিখতে।
শুক্রবারও তার মৃত্যুর সংবাদটা প্রথমে ফেসবুকের কল্যাণে পাওয়া। সকালেও খোলা ছিল মউর দোয়ান। সেখানে নাস্তা করতে গিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শিবা চৌধুরী। তিনিই প্রথম ফেসবুকে জানান তার মৃত্যুর খবর। তারপর থেকে ফেসবুকে আসতে থাকে শোক-স্মৃতিচারণ।
শিবা চৌধুরী বলেন, ‘সকালে নাস্তা করতে গিয়েছিলাম। এমন সময় তার এক ছেলের কাছে ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয় তার মৃত্যুর খবর।’
রেলস্টেশনের সেই বিখ্যাত দোকানটি তার নিজের জায়গাতেই আছে। আছে যে চেয়ারটিতে বসে মউ ‘শাসন’ করতেন সেটিও। কেবল পাঁচ ফুটের দেহটাই আজ থেকে নাই হয়ে গেল। ক্যাম্পাসের অদূরের বখতিয়ার ফকির মাজার এলাকার কবরস্তানে শুক্রবার বিকেলে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়বেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীর কাছে যার স্মৃতি-ভালোবাসা অমরত্বে বাঁধা, তার মরণজীবনও সুখের হোক…