নিজস্ব প্রতিবেদক: | ২৬ জুলাই ২০১৭ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ
অতি উৎসাহীদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বারবার বেকায়দায় পড়ছে শাসক দল আওয়ামী লীগ। ‘নব্য আওয়ামী লীগার’ বলে পরিচিত এই অতি উৎসাহীদের মধ্যে রয়েছে সাবেক ও বর্তমান আমলা, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কে কত বড় আওয়ামী লীগার, কে কতটা সরকারের কাছের- তা প্রমাণ করতে, সবার নজর কাড়তে, লাইম লাইটে আসতে নিজ উদ্যোগেই এরা একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্ম দিচ্ছেন। বিষয়টি দিন দিন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে- খোদ সরকার প্রধানকেই এসব ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীও জানেন না। বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত দলটির হাইকমান্ড। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারী অতি উৎসাহীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতির অভিযোগে বরগুনার ইউএনও গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও কারাগারে পাঠানো এবং তীব্র সমালোচনার মুখে মামলা প্রত্যাহারের ঘটনায় বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি শাহবাগে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অহেতুক পুলিশের মারমুখী ভূমিকা এবং সেখানে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের দৃষ্টি হারানোর (একটি চোখ সম্পূর্ণ এবং অপরটি প্রায় নষ্ট) ঘটনায় বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। এছাড়া কথায় কথায় বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়রসহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরখাস্ত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রয়োগ করে বাকস্বাধীনতা হননের অভিযোগসহ অসংখ্য ঘটনা সমাজের প্রায় সব স্তরের মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের।
অথচ দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘটনায় ছিল না সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ‘সবুজ সংকেত’। গত এপ্রিলে বিএনপি থেকে নির্বাচিত দুই সিটি ও এক পৌর মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, এটি প্রধানমন্ত্রীর অজ্ঞাতসারেই ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে জনমত পক্ষ রাখতে অনেক ঘটনার পরপরই দ্রুতগতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে শাসক দল আওয়ামী লীগকেই। তাদের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অতি উৎসাহীরা এসব বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে সুযোগ বুঝে সটকে পড়ে। কিন্তু দায়ভার নিতে হচ্ছে ক্ষমতাসীনদেরই। তাদের মতে, টানা দুই মেয়াদের আওয়ামী লীগের ক্ষমতার নয় বছরে বহু সুযোগসন্ধানী ভোল পাল্টে দলে ঢুকেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাবেক ও বর্তমান আমলা, আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগের খাতায় নাম লেখাতে শুরু করেছে। এই নব্যরাই দলকে বারবার বেকায়দায় ফেলছে বলে মন্তব্য তাদের।
বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও উদ্বিগ্ন। শুক্রবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ইস্যুতে আলোচনা হয়। জানা গেছে, ওই সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা অতি উৎসাহী হয়ে ছোট ছোট অনেক বিষয়কে বড় করে দেখাতে চাইবে। একটি অঘটন ঘটিয়ে দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে। তাই অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে আগেভাগেই সতর্ক ও সজাগ থাকতে হতে হবে।’
গত ২০ মে গণভবনে এক বিশেষ বর্ধিত সভায় দলে অনুপ্রবেশকারীদের ‘আবর্জনা’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কাছে তথ্য আছে, গ্রুপিং ভারি করতে অন্য দল থেকে সুবিধাবাদীদের দলে টানা হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মনে রাখবেন, এরা দলে ঢুকে কমিশন খাওয়ার লোভে। এরা তখন এত বেশি শক্তিশালী হয়ে যায় যে, এদের কনুইয়ের গুঁতায় আমার দলের নিবেদিতরা টিকতে পারে না। অন্য দলের লোক আওয়ামী লীগে দরকার নেই।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ‘দল ক্ষমতায় থাকলে সুবিধাভোগী মহল এর ভেতরে জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করে। এই মহলটি প্রকৃত নেতাকর্মীর চেয়ে যে কোনো কিছুতেই বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। যাদের অতি উৎসাহী বলা হয়। এই অংশ তৈরি হয় ক্ষমতাকে ঘিরে। এ গ্রুপের কাজই হল অনেক ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে দেখিয়ে ফায়দা হাসিল করা। বিতর্কের জন্ম দেয়া। এদের বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।’