অগ্রবাণী ডেস্ক | ৩১ জুলাই ২০১৭ | ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ
‘দিনে আমি রিকশা চালাই। এ সময় চুরি করি না। কিন্তু রাতে ঘুম আসে না। মন চায় চুরি করতে। চুরি করা অভ্যাস হয়ে গেছে।’
অকপটে কথাগুলো বললেন রবি (ছদ্মনাম)। তার নেশা চুরি করা। বিভিন্ন সময়ে অন্তত ২২ বার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে অকপটে চুরির কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। ভালো হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না এই সত্যবাদী চোর।
গত শনিবার বিকালে সর্বশেষ পিরোজপুর শহর থেকে চোরাই মালসহ রবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় সাপলেজা ইউনিয়ন। সাধারণত রবি ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করেন বলে এলাকাবাসী তার নামের সঙ্গে ‘সিঁধেল’ যুক্ত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে মঠবাড়িয়া উপজেলার পশ্চিম সেনের টিকিকাটা গ্রামের নবী হোসেনের বাড়িতে চুরি হয়। পরদিন শনিবার বিকালে পিরোজপুর শহরের থানা সড়কে সন্দেহজনক ঘোরাফেরার সময় পুলিশ রবিকে আটক করে। আটকের পর রবির সঙ্গে থাকা মঠবাড়িয়া থেকে চুরি করা নগদ ১৩ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও একটি মুঠোফোন উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে মঠবাড়িয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় গৃহকর্তা নবী হোসেন বাদী হয়ে রবিকে আসামি করে থানায় চুরির মামলা করেন। রোববার
রবি বলেন, মাঝেমধ্যেই চুরি করেন তিনি। সাধারণত মুঠোফোন ও ঘরের হাঁড়ি-পাতিল চুরি করা তার অভ্যাস। তবে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারও চুরি করেন। চোরাই মালসহ পুলিশ অন্তত ২২ বার গ্রেপ্তার করেছে। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবার চুরি করেন।
রবি আরও বলেন, ‘তিন বছর আগে এক বিচারক ভালো হওয়ার জন্য আমাকে জামিন দিয়ে একটি রিকশা কিনে দিয়েছিলেন।’ বেশ কয়েকবার চুরি করার ফলে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার কাছেই বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছেন রবি।
পিরোজপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন বলেন, ‘মঠবাড়িয়া থানায় থাকার সময়ে আমি রবিকে কয়েকবার গ্রেপ্তার করি। গত শনিবার বিকালে থানা সড়কে ঘোরাফেরা করার সময় তাকে ডেকে থানায় নিয়ে যাই। এরপর রবি স্বেচ্ছায় মঠবাড়িয়ার এক বাড়িতে চুরির কথা আমাকে জানায় এবং সঙ্গে থাকা চুরি করার মালামাল দেখায়।’ তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে রবিকে চুরির অভিযোগে দুইবার গ্রেপ্তার করার পর সে চুরির কথা স্বীকার করেছিল। আমার ২৭ বছরের চাকরির জীবনে এ ধরনের অদ্ভুত চোর আর দেখিনি।’
রবি চুরি করেন। আবার তা স্বীকারও করেন। রবির এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা হয় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রবি ইমপালস কন্ট্রোল ডিসঅর্ডার (তাড়না নিয়ন্ত্রণে অপারগতা) নামের একটি মানসিক রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসা দরকার। তাকে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।’ হেলালউদ্দিন বলেন, ‘তাকে কোনো শাস্তি দিয়ে রোগমুক্ত করা যাবে না। তাকে ওষুধও খাওয়াতে হবে।’
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রবিকে আদালতে সোপর্দ করেছি। তাই তার চিকিৎসার বিষয়টি আর আমার এখতিয়ারে নেই। এখন কারা কর্তৃপক্ষ চাইলে চিকিৎসা করতে পারে।’
পিরোজপুর জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক শামীম ইকবাল বলেন, ‘কারাগারে রবির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’