অনলাইন ডেস্ক | ১১ জুলাই ২০১৭ | ৯:২২ অপরাহ্ণ
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ‘গুমের’ তালিকা চাওয়ার প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকায় নিখোঁজ ২৫ জন নেতাকর্মীর নাম প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থান ও আশপাশের জেলা থেকে অন্তত ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। এদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের দেয়া তথ্য মতে ২০১৩ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৩৫ ব্যক্তি ‘গুম’ হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে রিজভী যে তালিকা দিয়েছেন তাদের প্রথমেই সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর নাম রয়েছে, যিনি ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ। অন্য ২৪ জন হলেন— সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হীরু, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও থানা ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন, তার খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর), পূর্ব নাগালপাড়ার আবদুল কাদের ভুঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এ এম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুল বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল চঞ্চল, নিজামউদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুম।
৩ জুলাই ভোরে বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের অন্তর্ধান এবং ১৮ ঘণ্টার মাথায় তাকে উদ্ধারের পর রিজভী অভিযোগ করেন, দেশজুড়ে একের পর এ ধরনের ‘গুম-অপহরণ ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তার ওই বক্তব্যের পর শুক্রবার ময়মনসিংহে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিএনপির কাছে ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা চান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০১-২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের কতজন নেতাকর্মী ‘গুম-খুন’ হয়েছিলেন তারও তালিকা দিতে বলেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটে নিখোঁজ ২৫ জনের তালিকা দিয়ে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুম ও নিখোঁজ হওয়া মানুষের খোঁজ পান না। নির্বিচারে কালবৈশাখীর গর্জনের মতো আওয়ামী নেতারা যখন অবলীলায় মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন এবং বলছেন তালিকার কথা, তাই আমি একটা অতিসংক্ষিপ্ত তালিকা শুধু ঢাকা শহরের, তার কাছে উপস্থাপন করলাম।
আরো অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও পেশার মানুষের কথা না-ই বললাম। এর সঙ্গে অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা যে তালিকা দিয়েছে, তা প্রকাশ করতে অনেক সময় লাগবে বলে তা আর দিলাম না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে নিখোঁজ এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে রিজভী বলেন, গুম হওয়া মানুষগুলোর পরিবারের নীরব কান্না থেমে নেই। স্বজনের বেদনার্ত আওয়াজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কানে ঢোকে না। এমনকি সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো কর্ণকুহরে যেন এদের কান্নার শব্দ প্রবেশ করে না। হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর স্বজনরা জানতেও পারেননি, তারা এখন জীবিত না মৃত। এগুলোর বিষয়ে কী জবাব দিতে পারবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক?
তিনি বলেন, বুকভরা বেদনা নিয়ে অপেক্ষায় আছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে নিরাপত্তাজনিত আতঙ্ক। শুধু গুম আর অপহরণই নয়, বরং তাদের পেটুয়া বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লাখ লাখ মানুষ এখন কাঁদছে। আর আওয়ামী নেতারা নিখোঁজ মানুষদের স্বজনদের দুঃখ-বেদনা ও কান্না নিয়ে উপহাস করছেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারের সর্বশেষ আক্রোশের শিকার হয়েছেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, কবি, লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার। তিনি এখন এতোটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে, শোনা যাচ্ছে যে মানুষজন ও আত্মীয়-স্বজনদেরও চিনতে নাকি কষ্ট হচ্ছে তার।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বিলকিস জাহান শিরিন, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল আউয়াল খান, মাহবুবুল হক নান্নু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শাহিন শওকত, হারুনুর রশীদ হারুন, জালাল উদ্দিন মজুমদার, গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল উপস্থিত ছিলেন।