ঢাবি প্রতিনিধি | ১৫ জুলাই ২০১৮ | ৮:৩০ অপরাহ্ণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভূক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর আাবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের বহিষ্কার করা হয়। রবিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাময়িকভাবে বহিষ্কৃতরা হলেন- সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোল্লা মোহাম্মদ আল ইমরান পলাশ, ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (ইসোল) বিভাগের মাহমুদ অর্পণ, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সিফাত উল্লাহ।
প্রক্টর জানান, অভিযোগকারীদের দেয়া হামলাকারীদের নামের বিষয়ে হল প্রশাসনের গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান চালায় এবং ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়।
শাস্তির আবেদন করতে আসা শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার ক্যাম্পাসে আমি ঘুরব, সেজন্য আইডি কার্ড দেখাতে হবে কেন?
তারা বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে আরেকজন শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড চেক করার অধিকার কে দিয়েছে? আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। রাজনীতি বুঝিনা, এ ঘটনার জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এসময় তারা এ ঘটনায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন।
প্রক্টর শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবেনা। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ ধরে জড়িতদের বিচার করব। হলের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকেও দ্রæততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে দুপুরে ঘটনার বিচার চেয়ে আবেদন করে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ভূক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী। এসময় তারা ঘটনায় জড়িতদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার এবং ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান। আবেদনপত্রে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হামলার ঘটনায় তিন ছাত্রলীগ কর্মীর নাম উল্লেখ করেন।
ঘটনা জানাতে রাত ৯টার দিকে ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীকে ফোন দিলে তিনি পাল্টা জানতে চান, ওই ছাত্রী এত রাত পর্যন্ত বাইরে কেন, ওই ছাত্রী কোন হলের আবাসিক ইত্যাদি।
পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল তাদের বক্তব্য শোনে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর একটি দরখাস্ত লিখতে বলেন। আহত ওই দুই শিক্ষার্থীকে তিনি হলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন এবং তাদের চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করেন।
শনিবার ঘটনার পর লীনা ফেইসবুকে লিখেন, তারা দুজন কার্জন হলে যেতে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এমন সময় ১০-১২ ছাত্র তাদের পথরোধ করে উদ্ধত ভঙ্গিতে পরিচয় জানতে চান ও আইডি কার্ড দেখাতে বলেন। পরিচয় দিয়ে কারণ জানতে চাইলেও তারা কার্ড দেখাতে বলে। কিন্তু কার্ড দেখানোর পর তাদের একজন ‘প্রথম বর্ষের ছেলে কি তোরে চার্জ করতে পারে না? ১ম বর্ষের পোলাপানের হাতে মাইর খাইতে খুব মজা লাগব’ বলে আসাদকে থাপ্পড় মারে। এসময় সবাই আসাদকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। লীনা বাঁচাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। মেরেই তারা সূর্যসেন হলের ভেতরে ঢুকে গেলে আসাদও পেছন পেছন ঢুকে মারধরের কারণ জানতে চান। তখন তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দিয়ে অন্তত ১৫ জন গেস্টরুম থেকে স্ট্যাম্প ও কাঠ নিয়ে এসে আসাদকে বেধরক পেটায়। লীনা আবারও তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়, এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীর পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে যায়।
ফেসবুকে লীনা লিখেন, আমরা দুজনেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। নিজের ক্যাম্পাসে এরকম শারীরীক-মানসিক হ্যারেস্মেন্ট ও হামলার শিকার হব সেটা মেনে নেওয়া অসম্ভব। আজকে পরিচয়পত্র দেখানোর পর, তাদের সিনিয়র জানার পরও হ্যারাস করল। আমার যে জুনিয়র বোন বা ভাই মাত্রই ক্যাম্পাসে আসল তাদের নিরাপত্তা কি তাহলে? আমার ক্যাম্পাসে আমি অতর্কিত হামলার শিকার হব কেন? আমরা সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যার আমাদেরকে আগামীকাল লিখিত দিতে বলেছেন এবং প্রক্টোরিয়াল টিমও আমাদের ন্যায্য বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন এই পর্যন্ত। আমরা লিখিত দিব।
এবিষয়ে মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। হলের সিসি টিভির ফুটেজ দেখে দোষীদের সনাক্ত করা হবে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন অনুসারে আমরা ন্যায্য বিচার করব। ভবিষ্যতে যেন ঢাবি ক্যাম্পাসে আর এমন ঘটনা না ঘটে।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী রোকেয়া গাজী লীনা ও তার বন্ধু আসাদুজ্জামান প্রান্তর ওপর হামলা চালায় সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকমীরা। এতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পায়ের নখ উঠে যায়। ছাত্রীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ কর্মীরা এমন হামলা চালায়। এ ঘটনা তদন্তে হল প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সূর্যসেন হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক তারেক জিয়াউর রহমান সিরাজীর নেতৃত্বে এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন।