অনলাইন ডেস্ক | ২২ আগস্ট ২০১৭ | ৮:১৫ অপরাহ্ণ
আজ মঙ্গলবার তিন তালাকে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। তাতে তিন তালাক প্রথাকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দিয়ে বলেছেন, এই প্রথা বিলোপ করতে ভারতের সংসদকে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আইন পাস করাতে হবে। তত দিন পর্যন্ত তিন তালাক প্রথা প্রয়োগ করা যাবে না। কিন্তু এই তিন তালাকের শিকার কয়েকজন নারীর পরিণতি শুনলে শিউরে উঠবেন আপনিও…
১) বিহারে বেগুসরায়ের বীরপুর থানা এলাকায় এক মহিলাকে তাঁর স্বামী তিন তালাক দিয়ে ছেড়ে দেয়৷ ২২বছর আগে মহম্মদ শাকিলের সঙ্গে রুবেদা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল৷ এরমাঝে মদের নেশায় আক্রান্ত হয় শাকিল৷ রুবেদা এদিক সেদিক কাজ করে তার ছয় সন্তান-পরিবারের অন্নের সংস্থান করে নিত৷ কিন্তু এত কিছুর পরেও শাকিল নেশা করার জন্য রুবেদার থেকে টাকা দাবি করত৷ এমনকি শারীরিক নির্যাতনও করত৷ এই অত্যাচার এমনই পর্যায়ে চলে যায় একদিন যে রুবেদা পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়।
২) হায়দরাবাদে এক স্ত্রী কে তাঁর স্বামী পোস্টকার্ড মারফত তিন তালাক লিখে পাঠায়৷ যে ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ পোস্ট কার্ডে তিন বার তালাক লেখা দেখে হতভম্ব হয়ে যান মহিলা৷ এই ঘটনার বিচার চেয়ে মহিলা পুলিশের কাছে গিয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে৷
৩) উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের বাসিন্দা এক মহিলার ৬বছর আগে বিয়ে হয়৷ পণের জন্য বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে তার ওপর নির্যাতন চলতে থাকে৷ একটি গাড়ি এবং ২লাখ টাকা দাবি করা হয় তার কাছ থেকে৷ দাবি অনুযায়ী সবকিছু না পাওয়ায় তার ওপর অত্যাচারের মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে৷ এরইমাঝে ওই নির্যাতিতার স্বামী তাকে তিন তালাক দেয়৷ ঘর থেকে বের করে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়৷ মহিলা ঘর থেকে বেরোতে না চাইলে, তার ভাসুর এবং দেওর তাকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ৷ এখানেই শেষ নয়৷ ওই মহিলাকে আগুনে ঠেলে দেওয়া হয়৷ ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরেই পুলিশ উপস্থিত হয়, প্রাণে বেঁচে যায় নির্যাতিতা৷
কাউকে বিয়ের প্রথম রাতেই তিন তালাক শুনতে, কাউকে আবার মেয়ে প্রসব করার জন্য শিকার হতে হয় এই প্রথার৷ এমনই আরও শত শত ঘটনা ঘটে গেছে চোখের আড়ালে৷ কোনও ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, কোনও ঘটনা আসেনি৷ প্রসঙ্গত, গত মে মাসে তিন তালাক বিবাহ বিচ্ছেদের ‘সব চাইতে জঘন্য এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পন্থা’, এমনই বক্তব্য শোনা যায় সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে৷ তিন তালাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে অসংখ্য আবেদন জমা পড়ে৷ তারই শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি জেএস কেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই অভিমত জানায় ৷
তিন তালাক বিষয়টির মামলার প্রথম সারিতে বসেছিলেন আনন্দ গ্রোভার, কপিল সিবাল, রাম জেঠমালানি, পিঙ্কি আনন্দ, ইন্দিরা জয় সিং এবং সলমন খুরশিদের মতন দুঁদে আইনজীবিরা৷ তিন তালাক প্রথাটির অবলুপ্তির জন্য সারা দেশ থেকে আবেদন আসে৷ এই মামলার শুনানিতেই রাম জেঠমালানি তিন তালাকের বিষয়টিকে জঘন্য বলে উল্লেখ করেন৷