অনলাইন ডেস্ক | ১৩ জুন ২০১৭ | ১:৩১ অপরাহ্ণ
নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টির পর তিন পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে অন্তত ২৫ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত দুই দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবান পৌর এলাকার কালাঘাটায় পাহাড়ধসে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন শিশু রয়েছে।
বান্দরবানের পর টানা বর্ষণে রাঙামাটিতেও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছে। সকালে শহরের যুব উন্নয়ন, ভেদভেদী, শিমুলতলি, রাঙাপানিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে পাহাড়ধসের খবর আসতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ১১ জনের মৃতদেহ এসেছে। এরা সবাই বিভিন্ন স্থানে বাড়ির ওপর পাহাড়ধসের ঘটনায় মারা গেছেন। নিহতরা হলেন রুমা আক্তার, নুরিয়া আক্তার, হাজেরা বেগম, সোনালি চাকমা, অমিত চাকমা, আইয়ুশ মল্লিক, লিটন মল্লিক এবং চুমকি দাশ। এ ছাড়া তিনজনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এই সময়ে কাপ্তাই উপজেলার রাইখালি ইউনিয়নের কারিগরপাড়া এলাকায় মাটিচাপা পড়ে উনু চিং মারমা এবং নিকি মারমা মারমা নামের দুইজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রাইখালি ইউপি চেয়ারম্যান ছায়ামং মারমা। কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় গাছের নিচে চাপা পড়ে আবুল হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন এবং ইকবাল নামের এক ব্যক্তি কর্ণফুলী নদীতে নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন।
এদিকে, প্রবল বর্ষণে রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন স্থানে মাটিচাপা পড়েছে অসংখ্য মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের রাঙামাটি টিমকে সহযোগিতা করতে চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকেও বাড়তি ইউনিট আসছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা। রাঙামাটি শহরে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
রাঙামাটির কোতোয়ালি থানার ওসি মুহম্মদ রশীদ জানিয়েছেন, এটা একটা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে। অনেক স্থানেই এখনো মানুষ মাটিচাপা পড়ে আছে।
এদিকে, চট্টগ্রামেও পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে পাহাড়ধসে চারজন নিহত হয়েছে। প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নিহতদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
বান্দরবান মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিক কেন্দ্র জানায়, গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটি এ পর্যন্ত জেলার সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। বন্যায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় পুরো জেলায় অন্তত ১০ হাজার পরিবার গৃহহারা হয়েছে। বান্দরবান পৌর এলাকায় ৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। বান্দরবান পৌর এলাকার আর্মীপাড়া, মেম্বারপাড়া, ইসলামপুর, বালাঘাটা ও কালাঘাটা পাঁচ ফুট পানির নিচে রয়েছে।
প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসে বন্ধ হয়ে গেছে বান্দরবান-রুমা সড়ক ও বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়ক। বান্দরবান-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের দুটি পয়েন্টে পানি উঠে গেছে। বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ছয়জনের প্রাণহানির কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হচ্ছে।
অনেক শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে লামা এবং আলীকদম উপজেলাতও। সোমবার দিবাগত রাতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে লামা পৌর শহর। আলীকদমের নিম্নাঞ্চলগুলো দুই থেকে তিন ফুট পানির নিচে রয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে। ত্রাণ তৎপরতা সমন্বয়ের জন্য আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।