মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম | ০৫ নভেম্বর ২০১৭ | ৩:২৭ অপরাহ্ণ
হজরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগের একটি ঘটনা। এক ব্যক্তির ঘরের পাশে ছিল একটি গাছ।
সেই গাছে ছিল একটি পাখি। পাখিটি যখনই ডিম দিত তখনই লোকটি তা নিয়ে খেয়ে ফেলত। লোকটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন পাখিটি হজরত সুলায়মান (আ.)-এর কাছে নালিশ করল। সুলায়মান (আ.) লোকটিকে ডেকে নিষেধ করে বললেন, আর কোনো দিন যেন এই পাখির ডিম খাওয়া না হয়। এর পরেরবারও লোকটি পাখির ডিম খেয়ে ফেলল। তাই পাখিটি আবার হজরত সুলায়মান (আ.)-এর কাছে নালিশ করল। সুলায়মান (আ.) এক জিনকে নির্দেশ দিলেন- লোকটি আবার যখন গাছে চড়বে, তখন খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেবে, যাতে লোকটি কোনো দিন গাছে চড়তে না পারে। এর পর একদিন লোকটি পাখির ডিমের জন্য গাছে উঠতে যাবে, এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে হাঁক দিল বাবা! কিছু ভিক্ষা দিন। তখন লোকটি প্রথমে ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। তারপর শান্ত মনে গাছে থেকে ডিম নামিয়ে খেয়ে ফেলল। পাখিটি আবার সুলায়মান (আ.)-এর কাছে নালিশ করল। সুলায়মান (আ.) সেই জিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নির্দেশ পালন করলে না কেন? তখন জিন জবাব দিল, আমি আপনার নির্দেশ পালন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এমন সময় পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুই ফেরেস্তা এসে আমাকে অনেক দূরে ফেলে দিল। সুলায়মান (আ.) বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, জিনটি বলল, আমি দেখলাম, লোকটি গাছে ওঠার আগে জনৈক ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। সম্ভবত এর বরকতে আল্লাহপাক তাকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। সুলায়মান (আ.) বললেন, হ্যাঁ সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। এ কারণেই সে তখন মহাবিপদ থেকে বেঁচে গেছে।
(তাযকেরাতুল আম্বিয়া)
দানের ফজিলত, শর্ত, দান যে কারণে কবুল বা নষ্ট হয় এই বিষয়ে আয়াতঃ
ﻣَّﺜَﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨﻔِﻘُﻮﻥَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻤَﺜَﻞِ ﺣَﺒَّﺔٍ ﺃَﻧﺒَﺘَﺖْ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻨَﺎﺑِﻞَ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺳُﻨﺒُﻠَﺔٍ ﻣِّﺎﺋَﺔُ ﺣَﺒَّﺔٍ ۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﻀَﺎﻋِﻒُ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎﺀُ ۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﺳِﻊٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨﻔِﻘُﻮﻥَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳُﺘْﺒِﻌُﻮﻥَ ﻣَﺎ ﺃَﻧﻔَﻘُﻮﺍ ﻣَﻨًّﺎ ﻭَﻟَﺎ ﺃَﺫًﻯ ﻟَّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﺮُﻫُﻢْ ﻋِﻨﺪَ ﺭَﺑِّﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺧَﻮْﻑٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﻫُﻢْ ﻳَﺤْﺰَﻧُﻮﻥَ
যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।
ﻗَﻮْﻝٌ ﻣَّﻌْﺮُﻭﻑٌ ﻭَﻣَﻐْﻔِﺮَﺓٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِّﻦ ﺻَﺪَﻗَﺔٍ ﻳَﺘْﺒَﻌُﻬَﺎ ﺃَﺫًﻯ ۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻨِﻲٌّ ﺣَﻠِﻴﻢٌ
নম্র কথা বলে দেয়া এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা ঐ দান খয়রাত অপেক্ষা উত্তম, যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা সম্পদশালী, সহিঞ্চু।