| ১৭ জানুয়ারি ২০২১ | ২:০৭ অপরাহ্ণ
ছিলেন জেলা রেজিস্ট্রার। তারপরও পৈতৃক জমি বাদেই গড়েছেন প্রায় দেড়শো বিঘা সম্পত্তি। এছাড়াও রয়েছে রাজশাহী শহরের অভিজাত দুই এলাকায় দুটি ভবন। তবে তার প্রতিপত্তি বা ক্ষমতার প্রভাব এতটাই যে, তার দ্বারা কোন অনিয়ম বা অন্যায় কাজ সংঘটিত হলেও এলাকার সাধারণ জনগণ কোন প্রতিবাদ করতেন না। শুধু তাই নয়, এই অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পরিবারটির বহুমুখী প্রভাবের কারণে মুখ খুলতেও ভীত গ্রামবাসী। আর অবসরপ্রাপ্ত এই রেজিস্ট্রারের স্ত্রী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তারেক রহমানের সঙ্গেও ছিল ঘনিষ্ঠতা। যার প্রভাব খাটিয়ে তৎকালীন সময়ে অনেক সম্পদ গড়ার পাশাপাশি এলাকায় বিশাল ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা পরিবার হিসেবে প্রতিষ্টা করেন। অনুসন্ধানকালে উঠে আসা সেই ব্যক্তি বা পরিবারটি হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার কলাবাগানে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দিহানের বাবা অবসরপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবদুর রউফ সরকার ও মা শিল্পী বেগমের। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার রাতুল গ্রামে। মূলত আলোচিত এই ধর্ষনের ঘটনার পরই পরিবারটির বিষয়ে এমন অজানা তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। তবে এই ক্ষমতাধর পরিবারের রোষানলে পড়ার শঙ্কায় তথ্যসরবরাহকারী এলাকাবাসীর অনুরোধে তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরতা জানতে একাধিক মাধ্যমে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। ফলে প্রাপ্ত তথ্যে দিহান পরিবারের ক্ষমতার পেছনের এই জোগানদাতার বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কার করবে কে? তবে ঘটনার মোড় ঘোরাতেই এমন বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে কী না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
অভিযুক্ত দিহানের গ্রামের প্রতিবেশীরা জানান, দিহানের বাবা আবদুর রউফ সরকার ২০০৯ সালে জেলা রেজিস্ট্রারের পদ থেকে অবসর নেন। এর আগে ঠাকুরগাঁ ও রাজশাহীতে জেলা রেজিস্ট্রারের দায়িত্বপালন করেন। চাকরিকালীন সময়ে দুর্গাপুর উপজেলার কিসমত গণকৈড়, বাগমারার তাহেরপুর, নওগাঁ জেলার আত্রাইসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক জমি কিনেছেন।
আর ভূমি অফিসের তথ্য মতে, শুধুমাত্র দিহানের বাবার নামে নিজ গ্রামেই জমি রয়েছে প্রায় ৭৮ বিঘা। এছাড়াও আছে পুকুর, ফসলি জমিসহ গ্রামের মধ্যে আলিশান বাড়ি। পাশাপাশি রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকা ও সাগরপাড়ায় জমি কেনাসহ বানিয়েছেন দুটি ভবন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিহানের নানার বাড়ি বগুড়ায়। দিহানের মা শিল্পী বেগমের ঘনিষ্ঠতা ছিলো বিএনপির তারেক রহমানের সাথেও। যার প্রভাব খাটিয়েও হয়েছেন ক্ষমতাধর, করেছেন অনেক সম্পদও। যে কারণেই শঙ্কার জায়গা থেকে নাম প্রকাশ করতে তথ্যদাতাগণ অনিহা করেছেন।
তবে দিহান পরিবারটির ইতিবাচক ভুমিকার বিষয়েও শনিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তথ্য দিয়েছেন এক কলেজ শিক্ষকসহ কয়েকজন ব্যক্তি। মুঠোফোনের মাধ্যমে তারা প্রতিবেদককে জানান, প্রতিটি মানুষেরই ভাল-খারাপ দিক থাকে। চাকরিকালীন সময়ে আবদুর রউফ সরকার ঘুষগ্রহনের মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করলেও পৈত্রিকভাবে তারা সম্পদশালী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। কোন ব্যক্তিসহ এলাকার বিভিন্ন সমস্যায় এই পরিবারটি এগিয়ে আসতো। এলাকার সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বাজার-হাট সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে জমিও দান করেছেন। অভিযুক্ত দিহানের দাদা মৃত ‘দায়েম সরকার’ নামকরণে এলাকায় একটি স্মৃতি সড়কও রয়েছে। তবে দিহানের দাদার মৃত্যুর পরই মূলত পরিবারটি সুনীতি ভ্রষ্টের দিকে ধাবিত হতে থাকে। বিশেষ করে, প্রায় গত ১০ বছর থেকে পরিবারের পৈত্তিক নীতি আদর্শ থেকে একেবারেই ছিটকে পড়েছে।
তাদের ভাষ্য মতে, দিহানের পরিবার মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকলেও চরিত্রগত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে কারণে এখন গরীব মানুষদের মামলা ও মোকদ্দমা ইস্যুতে ফাঁদে ফেলার ঘটনাও শোনা যাচ্ছে।
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য দিহানের গ্রামের বাড়িতে শনিবার বিকালে গেলে বাড়ির প্রধান দরজায় তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। এরপর মুঠোফোনের মাধ্যমে কথা বলার চেষ্টা করা হলে দিহানের বাবা আবদুর রউফ সরকারের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়ায় কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।