ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ | ২৫ মে ২০১৭ | ৯:০৩ অপরাহ্ণ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মজয়ন্তী আজ। মহান এই কবি ১৩০৬ সনের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা ও সাম্যের এই কবি মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতৃহারা হন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নজরুলকে কিশোর বয়সেই জীবনযুদ্ধে নামতে হয়। কখনো ভ্রাম্যমাণ লেটোর দলে, কখনো অন্যের বাড়িতে গৃহপরিচারক হিসেবে, কখনো রুটির দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ছোটবেলায়ই জীবন-সংগ্রামের তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি।
প্রচলিত সমাজব্যবস্থা, বিদেশি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে কলম ধরেন তিনি। বিদ্রোহ ও বিপ্লবের কবি হিসেবে ‘এলাম এবং জয় করলাম’-এর মতো সাফল্যও দেখান এই কবি। প্রথম মহাযুদ্ধ শেষে নজরুল যখন বাংলা কাব্যজগতে আগমন করেন তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের আলোয় আলোকিত এ দেশের সাহিত্যাঙ্গন। নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছিল বাংলা কাব্যজগৎ। নজরুল নিজের যোগ্যতায় রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে বাংলা কাব্য-সাহিত্যের আলাদা ভবন সৃষ্টিতে কৃতিত্ব দেখান। এ ব্যাপারে বিশ্বকবির আশীর্বাদও অর্জন করেন তিনি। মাত্র ২০ বছর সাহিত্য সাধনার পর ১৯৪২ সালে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিদ্রোহ ও বিপ্লবের এই মহান কবি। তারপর ৩৫ বছর বেঁচে থাকলেও তিনি ছিলেন বাকরুদ্ধ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয় তাকে। কবির চিকিৎসাসহ সব দায়িত্ব সরকার নিজের হাতে তুলে নেয়। ১৯৭৬ সালে পরপারে চলে যান কাজী নজরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধে এই মহান কবির কবিতা ও গান প্রতিকূলতাকে জয় করার সাহস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। জাতীয় কবির ১১৮তম জন্মজয়ন্তীতে তার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।
বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম স্বমহিমায় বাংলাসাহিত্যে চির ভাস্বর হয়ে আছেন। তার ‘অগি্নবীণা’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘ঘুমভাঙার গান’, ‘ফণিমনসা’, ‘সর্বহারা’, ‘জিঞ্জির’, ‘সন্ধ্যা’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘সাম্যবাদী’ ইত্যাদি কাব্যের মাধ্যমে তিনি জাগরণের গান শুনিয়েছেন মানুষকে। জাতির বন্দিত্ব মোচনের জন্য তার প্রচেষ্টা ছিল অকৃত্রিম।
লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম এবং প্রধান সম্পাদক দৈনিক আজকের অগ্রবাণী। e-mail: advahmed@outlook.com