এম, এ, রউফ খান রিপন | ২৩ অক্টোবর ২০১৭ | ৬:২৯ অপরাহ্ণ
পত্রিকায় চাকুরীর বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করছে বেশ কিছু সক্রিয় চক্র। নানা চটকদারি ও লোভনীয় বেতনের অফার দিয়ে দেশের সাদাসিধে সরল শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করছে এই সংঘবদ্ধ চক্রগুলো । নিজ জেলা ও নিজ থানায় নিয়োগ দেওয়া হবে এই জাতীয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারনা করা হচ্ছে। গ্রামীণফোন টাওয়ার কোম্পানী, থ্রিজি নেটওয়ার্ক সেকশনে অফিসিয়াল কাজে পার্ট/ফুলটাইম হনচার্জ, এরিয়া ম্যানেজার, রিজিওনাল ম্যানেজার, ডেক্স অফিসার, রিসিপশনিষ্ট ইত্যাদি বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে ইন্টারভিউ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের প্রতারিত করছে চক্রগুলো।
প্রিয় পাঠক গত ১৬ ই আক্টোবর আজকের অগ্রবানী পত্রিকার খুলনা প্রতিনিধির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হুবহু তুলে ধরা হচ্ছে। খুলনা বি এল কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা রহমান গত ইং ১লা সেপ্টেম্বর কালের কন্ঠ প্রত্রিকায় প্রকাশিত চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে প্রদত্ব মোবাইল নম্বারে (০১৭৫৩৩৫৯৩২১) যোগাযোগ করে বি এল কলেজ ছাত্রী ফাতেমা রহমান।
ফাতেমার দেওয়া তথ্যে নম্বারটিতে অপূর্ব নামে একজন লোক ফোনটি রিসিভ করলে ফাতেমা নিজেকে একজন চাকুরী প্রার্থী বলে। তারপর অপূর্ব তাকে একটি ইমেইল আইডি দিয়ে বায়োডাটা সেন্ড করতে বলে। ফাতেমাও প্রদত্ব ইমেইলে নিজের বায়োডাটা পাঠিয়ে দেয়। বায়োডাটা পাঠানোর ঠিক দুই দিন পরে একই নম্বার থেকে ফোনে বলা হয় আপনাকে ইনচার্জ পদে জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। তবে আপনাকে বেশকিছু শর্তাবলী পালন করিতে হবে।
চাকরির শর্তাবলীঃ ১ম শর্ত প্রার্থীকে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাবদ ৫০০/- টাকা বিকাশে প্রদান করিতে হবে।
২য় শর্ত দুই সেট পোশাক, জুতা, মোবাইল সেট সিম সহ, নেটওয়ার্ক মিটার বাবদ ৩৫০০ টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। সপ্তাহে ৬ দিন প্রতিদিন ৯ ঘন্টা করে ডিউটি পালন করিতে হবে।
চাকরির সুবিধা সমূহঃ হনচার্জ পদে মাসিক বেতন ১৭৫০০ টাকা, পুর্বের জমা ৩৫০০ টাকা দ্বিতীয় মাসের বেতনের সাথে ফেরত দেওয়া হবে, প্রতি মাসের বেতন ৫ তারিখের মধ্যে প্রদান করা হবে, প্রশিক্ষন চলাকালিন থাকা খাওয়া চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ দেওয়া হবে, সকল সরকারী ছুটি সহ বাৎসরিক ২৫ দিন ছুটি দেওয়া হবে, এরিয়াম্যানেজার / ইনচার্জ ও সুপারভাইজারদের শর্তসাপেক্ষে মোটর সাইকেল প্রদান করা হবে।
নিজ জেলা ও নিজ থানায় এজাতীয় লোভনীয় চাকুরির অফার যে কারো জন্য লুফে নেওয়া স্বাভাবিক। তাই আমাদের রিপোর্টে উল্লেখিত ফাতেমা রহমানের পক্ষে লোভনীয় চাকুরির অফারটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই ফাতেমা রহমান চাকুরির র্শতাবলী পূরনের প্রথম পর্যায়ে ৪০০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করে। এর পর ফাতেমার কাছে ল্যাপটপ বাবদ ৫০০০ টাকা চাওয়া হলে ফাতেমা পড়ে যায় বিপাকে। একজন স্টুডেন্টে এর কাছে এতগুলো টাকা যোগার করা দুরুহ। ইতিমধ্যে ফাতেমা এই ভুয়া কোম্পানিতে ৪০০০ টাকা প্রদান করেছে। তাই ফাতেমা এক আত্নিয়ের সরনাপন্য হয় ৫০০০ টাকার জন্য, ফাতেমার নিকট আত্নিয় বিস্তারিত সব শুনে ফাতেমাকে গ্রামীণফোন খুলনা রিজিওনাল অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে পরামর্শ দেয়। যথারিতি জিপি অফিসে যেয়ে ফাতেমা জানতে পারে এই জাতীয় কোন নিয়োগ গ্রামীণফোনে নাই। ফাতেমা রহমানের বুঝতে বাকি রইল না যে তিনি প্রতারিত হয়েছে।
পাঠক দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনের নাকের ডগার সামনেই চলছে এই সকল নিয়োগ বানিজ্য। এই রকম হাজারো ফাতেমারা প্রতারণার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর তাদের সাথে তাল মেলাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্বনামধন্য কিছু পত্রিকা। সামান্য কিছু অর্থের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাপিয়ে সমান ভাবে দায়ী এই সকল পত্রিকা গুলো রথি মহারথিরা। তাই এই বিষয়ে অতিদ্রুত প্রসাশনিক পদক্ষেপ না নিলে হাজারো ফাতেমারা প্রতারিত হয়ে হতাশায় নিমোজ্জিত হয়ে নানা মূখি অপরাধে জরিয়ে পড়ার আশংকা করছি। সে ক্ষেত্রে সমাজ তথা রাষ্ট্রের কিছুই করনীয় থাকবে না।