বিশেষ প্রতিনিধি: | ০১ জুন ২০১৭ | ৯:৩৩ অপরাহ্ণ
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরামের সভাপতি ও দৈনিক আজকের অগ্রবাণীর প্রধান সম্পাদক ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ অর্থমন্ত্রীর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক পৃথক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এবারের বাজেটে নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছে নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন ইস্যু। আইনটি জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে। এ নিয়ে বাজেটের আগেই জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নিজেও নতুন আইনটির বাস্তবায়নকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি এবং অবচয়ন বিবেচনাপূর্বক এ সীমা বৃদ্ধি করা উচিত। একইভাবে নারী এবং ৬৫ উর্ধ্ব করদাতাদের ক্ষেত্রেও করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করা উচিত। তাছাড়া ব্যবসায়ীদের দাবির পরও ১৫ শতাংশ ভ্যাট অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আমরা আবারও এ হার পুনর্বিবেচনা করে ১০ থেকে ১২ করার দাবি জানাই। ’
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি সংস্থা কর্তৃক এডিবি বাস্তবায়ন হার শত ভাগ সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেওয়া। এক্ষেত্রে এডিবি শতভাগ বাস্তবায়ন হলে, দেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বন্দর উন্নয়ন হলে প্রচুর বৈদেশিক বিনিয়োগ, শিল্পায়ণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। এতে বাংলাদেশের জিডিপি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। ’
ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন,করপোরেট কর হার কমানো, কম্পিউটারসহ মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এমন অনেক খাতে শুল্ক কমানো হয়েছে। যা খুবই ইতিবাচক। এ ছাড়া এই বাজেটকে বাণিজ্যবান্ধব বাজেট বলা যেতে পারে। অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের জন্য যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে।
এবারের বাজেটে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার ফাস্ট ট্র্যাকের ১১ মেগা প্রকল্প সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এর মধ্যে চলমান আট প্রকল্পে ৩৩ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ সব প্রকল্পে চলতি অর্থ বছরের বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ২৪ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। বাজেটে দেশে এ যাবত্কালের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকায় চলমান এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে ১১ হাজার ২৪৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে ৬ হাজার ৫৩২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আগামী বছরের এপ্রিল মাসে রাশিয়া থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপকরণ আসা শুরু হবে।
অন্যদিকে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে চলমান পদ্মা সেতু প্রকল্পে মার্চ পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৭৭ কোটি টাক ব্যয় হয়েছে। আগামী অর্থ বছর এতে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। ফাস্ট ট্রাকের মধ্যে দৃশ্যমান সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে এ প্রকল্পে। অন্যদিকে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থ বছর এ কাজে ৪ হাজার ১০২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। মার্চ মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে মাত্র চার কোটি টাকা। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা চলমান মেট্রো রেল প্রকল্পে মোট খরচ হয়েছে ৭৬০ কোটি টাকা। নতুন অর্থ বছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তিন হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এছাড়া আসছে অর্থ বছরে মাতারবাড়ী কয়লাভত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরে থাকছে ৬শ কোটি টাকা। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ৩ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হবে।