ফারুক আহম্মেদ (জাপানী ফারুক) | ০৪ আগস্ট ২০১৭ | ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তাই ১৫ আগস্ট বাঙালির সবচেয়ে বড় শোকের দিন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলেন নায়কের বেশে। পেলেন বীরোচিত সংবর্ধনা, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকেই জীবন দিতে হয় দেশি-বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়ে। অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় তাঁর পরিবারের সদস্যদের, এমনকি ছোট্ট শিশুটিকেও।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতিহাসের এই নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডটি ছিল একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই অংশ। সদ্য স্বাধীন দেশ গঠনে যখন সরকার ব্যস্ত, তখনই হত্যা করা হলো দেশের স্থপতিকে। এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করার, ভিন্ন পথে ধাবিত করার এক গভীর ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি যেমন ছিল, তেমনি ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিতে লুকিয়ে থাকা কিছু সুযোগসন্ধানী ও বর্ণচোরা মানুষ। স্বাধীনতার পর থেকেই সুযোগ খুঁজতে থাকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, নানা ছত্রচ্ছায়ায় তারা সংগঠিত হতে শুরু করে। আর তাদের সঙ্গে হাত মেলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি।
আর তারই শিকার হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা কেবল একজন ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারকে হত্যার প্রয়াস ছিল না, ছিল জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নকেই হত্যার অপচেষ্টা। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে খুন করে তারা একটি আদর্শকে খুন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আদর্শের মৃত্যু নেই- এই সত্যটি তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকেও তাঁর স্বপ্ন থেকে বিচ্যুত করা যায়নি। এই হত্যাকাণ্ডকে ‘কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের’ কাজ হিসেবে অভিহিত করে, সেদিন যারা এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল, তারা সবাই ছিল এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারিগর। আর সে কারণেই প্রত্যক্ষ হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছিল এবং পুরস্কৃত করেছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে এবং শুরু হয় প্রচলিত আইনে বিচার। সে বিচারের রায় আংশিকভাবে কার্যকর হয়েছে। কিছু আসামি দেশের বাইরে অবস্থান করায় এখনো তাদের দণ্ড কার্যকর করা যায়নি। যত দ্রুত সম্ভব রায় সম্পূর্ণভাবে কার্যকর করতে হবে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নতুন করে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল মাত্র তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে সঙ্গে তা থেমে গিয়েছিল। শুধু থেমে যায়নি, বরং উল্টো পথে পরিচালিত হচ্ছিল। তাই আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করাটাই হবে তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের সর্বোত্তম পন্থা। আজকের এই দিনে আমরা তাঁকে স্মরণ করি পরম শ্রদ্ধায়। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের ভেতর দিয়েই এই মহান নেতার প্রতি যে অসীম দায় আমাদের, তার সামান্য হলেও পরিশোধ করা সম্ভব হবে। এ দায়িত্ব দেশের প্রত্যেক নাগরিকের। আজ শোক হোক আমাদের শক্তির উৎস। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।
লেখক : সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটি, সাধারণ সম্পাদক জাতীয় শ্রমিক লীগ আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটি ও সহ সভাপতি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ।