
ডেস্ক | বুধবার, ০৪ মার্চ ২০২০ | প্রিন্ট
গণফোরামের অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলে এবং পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যেই কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন ড. কামাল হোসেন। এই কামাল হোসেনের নেতৃত্বেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছোট ছোট দল নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে বিএনপি। আর ঐক্যফ্রন্টের হাত ধরেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল বিএনপি।
গণফোরাম কমিটির বিলুপ্তির পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, বড় নেতা হয়ে যিনি নিজের ছোট দল চালাতে পারছেন না, সেখানে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব কিভাবে দেবেন?
ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা হিসেবেই অধিক পরিচিত। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার। ১৯৭০ সালের পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালে পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. কামাল হোসেন জাতিসংঘের স্পেশাল রিপোর্টারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়। তিনি বর্তমান গণফোরাম সভাপতি।
এদিকে বুধবার গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন ড. কামাল হোসেন। পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত ড. কামাল হোসেন সভাপতি ও রেজা কিবরিয়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বুধবার গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, গত বছরের ২৯ এপ্রিল গণফোরামের কাউন্সিলের পরে তিন থেকে চারজন কেন্দ্রীয় নেতা নিজেদের পছন্দ মতো কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে সভাপতির অনুমোদন গ্রহণ করেন। কিন্তু ওই কমিটির নেতৃত্বে দলে গতি সৃষ্টির পরিবর্তে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেন। গণমাধ্যমে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদ প্রকাশিত হয়, যা মেনে নেয়া যায় না এবং চলতে দেয়া যায় না।
এ পরিস্থিতিতে বিশেষ কাউন্সিল ২০১৯ কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কামাল হোসেন ২০১৯ সালের ৫ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কামাল হোসেনকে সভাপতি ও রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারা দলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে কামাল হোসেন জানান, চলতি মাসেই আহ্বায়ক কমিটির অন্য সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠনতান্ত্রিক সব ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার রাখবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জেলা, থানা/ উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো আগের মতোই বহাল থাকবে।
অন্যদিকে সম্প্রতি গণফোরামে অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার চলে। গত সোমবার গণফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খান সিদ্দিকুর রহমান এবং প্রবাসীকল্যাণ সম্পাদক আব্দুল হাছিব চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর মঙ্গলবার বহিষ্কৃত এই চার নেতা দলটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া, সহসভাপতি মহসীন রশীদ, সহসভাপতি শফিকউল্লাহ ও যুগ্ম সাধারণ মোস্তাক আহমেদকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।
বহিস্কৃত চার নেতা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানতে পারি গণফোরামে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও অবাঞ্ছিত জনৈক মোস্তাক আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের ৪৩ (কর্মকর্তা অপসারণ) ধারা অমান্য ও অবজ্ঞা করে রাজনৈতিক চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে ও দলীয় ঐক্য বিনষ্ট করার হীনস্বার্থে চার জন কেন্দ্রীয় নেতার নামে অবৈধ, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। যা সভাপতি পরিষদ, সম্পাদকমণ্ডলী, স্থায়ী কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়নি কিংবা সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে- গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল পরবর্তিতে দীর্ঘ সাত মাস দলের কোনো সভা হয়নি। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহবান করার জন্য ৫৯ জন কেন্দ্রীয় নেতার স্বাক্ষরে দলের সভাপতি, দুই নির্বাহী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর ২১ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে তিন দফা দাবিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়। দাবিসমূহ ছিলো- দল গঠনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হবে, বিশেষ কাউন্সিল পরবর্তী ঘোষিত কমিটির বাইরে নতুন কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ ও পদায়ন করা যাবে না, দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহবান করতে হবে।
তবে দলের সাধারণ সম্পাদককে মৌখিক ও একাধিকবার লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আহবান করার অনুরোধ করলেও তিনি দলের অফিসে হাজির না হয়ে মাসের পর মাস বিদেশে অবস্থান করে অফিসের বাইরে উপদলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পরেন।
বিবৃতি আরো বলা হয়, গত ২৮ জানুয়ারি (২০২০) তারিখে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া ও যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদকে উপদলীয় কোন্দল, দায়িত্বে অবহেলা ও দলের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত না থাকার কারণে অব্যাহতি দেয়া হয়। এই অব্যাহতির পর ১৮ জন সম্পাদককে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও দলে অবাঞ্ছিত জনৈক মোস্তাক আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে শোকজ নোটিশ প্রদান করা হয়, যা গঠনতন্ত্রের ৪৩ ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একমাত্র কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আত্মপক্ষ সমর্থনের পর দুই তৃতীয়াংশ সদস্যদের সম্মতিক্রমে কোনো কর্মকর্তাকে অব্যাহতি কিংবা বহিষ্কার করতে পারে। আর আমাদের জানা মতে গত দশ মাসের মধ্যে কোনো পূর্ণাঙ্গ সভাপতি পরিষদ সভা, স্থায়ী কমিটির সভা কিংবা কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও অবাঞ্ছিত একজন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত চিঠি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রদান করে দলের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র অমান্য করা হয়েছে এবং উক্ত ব্যাক্তি নিজেকে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা-বিরোধী ও গঠনতন্ত্র-বিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বাক্ষরকারী ব্যক্তি দলের মুখপাত্র কিংবা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ নন।
গণফোরামের বহিস্কৃত নেতা এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম বলেন, দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। আর গণফেরামেও কোনো গণতন্ত্র নেই। এই কথাটা কাকে বলি। এই কথা বলার কেউ নেই। তাই এই অবস্থা হয়েছে।
হামিম অভিযোগ করে বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকে একটা কেন্দ্রীয় কমিটি ও স্থায়ী কমিটি এবং সম্পাদক মন্ডলীয় মিটিং হয়নি। আর প্রেসিডিয়ামদেরও পূর্ণাঙ্গ কোনো মিটিং হয়নি। এই অবস্থায় দল চলবে কিভাবে?
Posted ৭:৫০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৪ মার্চ ২০২০
ajkerograbani.com | shalauddin Razzak
.
.
Archive Calendar