আসিফ হাসান কাজল | ০১ জুলাই ২০১৮ | ১১:০২ পূর্বাহ্ণ
অভ্যাসগত ভাবে হাত দিয়ে নাক চেপে ভবনের অভ্যন্তরে এগিয়ে চলেছি। প্রবেশ করতে আলো আর বাতাশের উপস্থিতি যেন একটু কম কম মনে হচ্ছে পড়ন্ত বিকেলবেলায়।
বাম পাশে জরুরী বিভাগ কক্ষে বেশ নীরবতা। মনে মনে বলছিলাম এখন ডাক্তার উপস্থিত নেই মনে হয়, এই তো আমাদের সরকারী হাসপাতাল গুলোর চলমান খন্ডচিত্র ভাবতে ভাবতে লজ্জাই বোধকরি পেয়েছিলাম ? মুখ বাড়িয়ে দেখলাম পরিচ্ছন্ন জরুরী বিভাগে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে ৩ টি রুগী বহন করা চাকাযুক্ত ট্রলি। পাশেই লেখা ময়লা /প্যাড ও আবর্জনা এখানে ফেলুন। ডাক্তার তার নির্দিষ্ট কক্ষেও কর্তব্যরত রয়েছেন বলে দেখতে পেলাম।
চিন্তার সাথে বাস্তবতার মিল না থাকায় মানসিক ঢাক্কা খেয়ে সরু গলিপথ ধরে আমি এগিয়ে চললাম দ্বিতল ভবনের অভ্যন্তরে । বড় ব্যানারে লেখা বিদ্যুৎ, পানি,এম্বুলেন্স,তথ্য ঘর নাক/কান/গলা, কি খুজছেন আপনি সব যেন আপনাকে হাত ছানি দিয়ে ডাকছে! এ কি সরকারী হাসপাতাল প্রশ্ন মনে আসতেই আমার নাক থেকে হাতটি সরে পড়েছে! অবাক হলাম হাসপাতাল জুড়ে কোন উৎকট বাজে গন্ধ না পেয়ে! এটি ২৫০ শয্যার কোন নামধারী সরকারী হাসপাতাল নয় এটি সাদামাটা ১০০ শয্যার সেবাবান্ধব ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল।
এখানে রোগীকে নিচতলা থেকে দুই তলা উঠাতে ট্রলির জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করতে লাগেনা। এই হাসপাতালে রোগী উপর – নিচ করতে ৫০/৬০ টাকাও বখশিশ দেওয়ারও সুব্যবস্থা রাখা হয়নি ! সাধারন মানুষ কে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহন করতে এসে যেন বিড়ম্বনা না পেতে হয় সে জন্যই সব পরিপাটি ভাবে সাজানো ।
দেওয়াল থেকে দেওয়ালে চোঁখ বুলিয়ে দেখছি, সদর হাসপাতালে যে যে ঔষধ প্রাচুর্যতা আছে সেগুলি বড় আকারের সাদা বোর্ডে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে । ব্লাড গ্রুপ নির্নয় থেকে এক্সরে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফী কি ইসিজি সরকারী নির্ধারিত মূল্যে পরীক্ষা নিরীক্ষার সুব্যবস্থা সেবার মান সম্পর্কেই ইঙ্গিত দেয় । কেবিনে যাওয়ার পথে কি পুরুষ/মহিলা ওয়ার্ডে চারিদিক জুড়েই সাহায্যরূপ নির্দেশনা রয়েছে। এম্বুলেন্স চান এই নম্বরে কল করুন, পানি লাগবে সেই নম্বরও রয়েছে! আসতে অন্যান্য সরকারী হাসপাতাল গুলির মত দায়সারা সাইনবোর্ড এখানে নেই। এখানে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে রয়েছে স্বচ্ছতা, সেবার মান নিয়ে আর পাঁচটা হাসপাতালের মত কর্তৃপক্ষ মোটেও উদাসীন নয়।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের দুই তলা ভবনে উঠতে এক প্রকার প্রথাবিরোধী অবস্থাই যেন দেখতে পেলাম। অবাক হয়ে লেখাগুলি পড়ছিলাম! প্রসূতি বিভাগে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ! এগিয়ে যেতেই আরও দেখলাম লেখা রয়েছে জুতা খুলে প্রবেশ করুন ! সত্যিই এমন অবস্থা আশপাশের জেলা তো দূরে থাক বাংলাদেশে অন্য কোথাও আছে কিনা আমি সন্দিহান ছিলাম।
সেই সন্দেহ দূর করতেই কথা হলো পরিবর্তনের সেই রুপকার ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা.ইমদাদুল বলছিলেন হাসপাতালের পরিবেশ পরিবর্তন আর সেবার মান উন্নয়নের দিনগুলির কথা। যশোর চৌগাছা স্বাস্থ কমপ্লেক্স ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের এই অগ্রযাত্রার গল্পকথা। জানালেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বর্তমানে দুই হাসপাতালকে মডেল হিসাবে “সিজে” মডেল হিসাবে অন্যান্য হাসপাতালে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন।
ডা: ইমদাদুল এর চিকিৎসা সেবা সাধারণ জনগনের কাছে পৌছে দিতে আর উদ্ভাবনী পরিকল্পনা গ্রহন আর বাস্তবায়ন এর গল্প যেন রুপকথা আর এই চিকিৎসক এর অবদান ও সেবাদানের গল্প না হয় অন্য দিন শুনাবো।