
ডেস্ক রিপোর্ট | সোমবার, ০৪ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চারদিক শুধু সবজি আর সবজির সমারোহ। সবজি চাষে অপার সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা অর্থনীতি উন্নয়নে এক অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
উন্নত বীজ, আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষি অফিসের তদারকিতে স্থানীয় কৃষকরা সবজির ভালো ফলন পাচ্ছে। সেই সঙ্গে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষকরা সবজির ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় বেজায় খুশি। এখানকার সবজি স্থানীয়ভাবে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে সারা দেশে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে পতিত জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি আবাদ করায় বদলে যাচ্ছে কৃষকের জীবনযাত্রা।
স্থানীয় কৃষকরা কোনো প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় পদ্ধতিতে মৌসুম অনুযায়ী বছর জুড়ে বেগুন, বরবটি, করলা, উসতা, টমেটো, খিরা, মিষ্টি কুমড়া, ঝিংগা, কাকরল, ঝালি, আলু, মুখি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লালশাক, টমেটো, শিম, লাউ, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করছেন। সেই সঙ্গে তারা মরিচ, ভুট্টা গম, পাট, ধান ও আবাদ করছেন।
জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ করা হচ্ছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির আবাদ। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার না করেই করছেন সবজি চাষ। ফলন ভালো করতে সব সময় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিচ্ছেন কৃষকরা।
গম, পাট, ধানের চাইতে সবজিতে বেশি আয় হওয়ায় বছর জুড়ে স্থানীয় কৃষকরা এসব চাষ করছেন। এখানকার সবজির সবজির সুনাম রয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, আশুগঞ্জ, ভৈরব, ঢাকা, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, শ্রীমঙ্গলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় চারদিকে শুধু সবজি আর সবজি নজরে পড়ছে। কৃষকরা সবজি পরিচর্যাসহ বাজার জাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বনগজ গ্রামের কৃষক মো. জামির হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ৬০ শতক জায়গায় করলা, মিষ্টি কুমড়া, খিরাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। এতে তার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা আসায় বিক্রিতে ভালো দাম পাচ্ছেন। যাবতীয় খরচ বাদে ১ লাখ টাকার বেশি আয় হবে।
কৃষক মো. মান্নান মিয়া জানান, দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ফুলকপি, লাউ, মুলা, লাল শাক, টমোটোসহ নানা জাতের সবজির আবাদ করা হয়। এ পর্যন্ত তিনি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে যাবতীয় খরচ বা দেড় লাখ টাকা আয় হবে।
ধাতুর পহেলা গ্রামের কৃষক মো. মোস্তাকিম সরকার জানান, দেশীয় পদ্ধতিতে ৩ বছর ধরে ২০ বিঘা ইজারা নিয়ে মৌসুম অনুযায়ী টমেটো, করলা, শসাসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করেছেন। বাজার দর ভালো থাকায় যাবতীয় খবর বাদে এ মৌসুমে তার ১০-১২ লাখ টাকার ওপর আয় হবে।
কৃষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধান চাষে লোকসান থাকায় গত ৭ বছর ধরে তিনি সবজি আবাদ করছেন। এ মৌসুমে তিনি বাড়ি সংলগ্ন ৬০ শতাংশ জায়গায় দেশীয় পদ্ধতিতে লাউ, লাল শাক, টমেটো, করলা, পেঁপে, কাকরোল, বরবটি, চাষ করেন। খরচ বাদে ও পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে এই জমি থেকে ৫০ হাজার টাকার ওপর তার আয় হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় এখানকার সবজি নিজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকাররা নিয়ে বিক্রি করছেন।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলার বেশিরভাগ গ্রাম সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এসব এলাকার কৃষকরা নিজ উদ্যোগে দেশীয় পদ্ধতিতে সবজি আবাদে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। ফলন ভাল করতে সব সময় তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মৌসুম বেধে সবজি আবাদে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
Posted ১২:২০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ এপ্রিল ২০২২
ajkerograbani.com | shalauddin Razzak
.
.
Archive Calendar