অনলাইন ডেস্ক | ৩০ আগস্ট ২০১৭ | ১১:২০ অপরাহ্ণ
এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেকের জন্য এখন পর্যন্ত মাথাপিছু ৯ টাকা ৭৫ পয়সা করে বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আর এই বরাদ্দকে অপ্রতুলও মনে করা হচ্ছে না।
মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ শাখার প্রধান ও উপসচিব মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৬ আগস্ট পর্যন্ত নগদ সহায়তা হিসেবে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ টাকা বন্যায় আক্রান্ত ৩২ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
মাথাপিছু ১০ টাকারও কম বরাদ্দ অপ্রতুল কি না জানতে চাইলে উপসচিব দাবি করেন, এই বরাদ্দ অপ্রতুল নয়। সামনের দিনে বরাদ্দ আরো বাড়বে।
মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ গঠিত মনিটরিং সেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার বন্যায় সর্বমোট ৮২ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৮ আগস্ট পর্যন্ত নগদ আট কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যার্তদের মধ্যে এ টাকা বিতরণ করেছে। এ ক্ষেত্রে একেকজন বন্যার্তর ভাগে পড়েছে ১০ টাকারও কম।
এবার বন্যার জন্য অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলকে দায়ী করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গঠিত এই মনিটরিং সেল। সেলের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে দেশের ৩২টি জেলার ২১০টি উপজেলা ও ৫৮টি পৌরসভা। ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের সংখ্যা হচ্ছে এক হাজার ২৮৯টি ইউনিয়নের ৯ হাজার ২৪০টি গ্রাম।
এসব গ্রামের সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা তিন লাখ ২৩ হাজার ৮৫৭ জন আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭৮ লাখ ৬৯ হাজার ২১৫ জন। ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সখ্যা ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৭২ জন।
মনিটরিং সেলের তথ্য মতে, ৫৫ হাজার ৩৮৩টি ঘরবাড়ি বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা হলো ৬ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৬টি। এ ছাড়া বন্যার কারণে দেশের ৩৫ হাজার ২৩ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আর পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমির আংশিক ফসল নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে বন্যায় মারা গেছেন ১৪০ জন।
উপসচিব মোহাম্মদ হোসেন আরো বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তেদর জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা ছাড়াও ২৩ হাজার ৭২০ টন চাল ও ৪৬ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলের আগাম বন্যায় ও পাহাড়ি ধসে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আলাদাভাবে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে সরকার।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মাথাপিছু এত কম বরাদ্দের কথা স্বীকার করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল। তবে তিনি বলেন, ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তা আরো বেড়েছে। বন্যা যত দিন থাকবে তত দিন ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা কাজ করছেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এ ছাড়া হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সেই কৃষকদের জন্যও আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা শেষ হওয়ার পর পরই ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন মেরামত ও সংস্কার করা যায় সে লক্ষ্যে এখন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে বলেও জানান সচিব। সূত্র: এনটিভি