অনলাইন ডেস্ক | ১৯ আগস্ট ২০১৭ | ৬:০৭ অপরাহ্ণ
বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়িসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। প্রাণহানি হয়েছে ব্যাপক ।ঘরহীন হয়েছেন বহু মানুষ। পশুও মারা গেছে অনেক গৃহস্তের। বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় অর্ধকোটি।
টেলিভিশনে আমরা ঢাকায় বসে ত্রাণের জন্য অনেক বয়স্ক মানুষকে কাঁদতে দেখেছি। পর্যাপ্ত ত্রাণ না পৌঁছায় অনেক মানুষ আধপেট খেয়ে কেউ বা না খেয়ে দিনাতিপাত করেছে।
এই যে মানুষের দুর্ভোগ, এটা নিয়েও রাজনীতির খেলা ঠিকই চলছে। একটি টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখা গেল, বন্যাকে ইস্যু করে আওয়ামী লীগের ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করবে সরকার। বিএনপির মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন, দুর্গতদের ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় সরকার ব্যর্থ। আবার স্বৈরাচার এরশাদ বলেছেন, বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। একই টেলিভিশনে বন্যার খবর হচ্ছে- উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অবনতি মধ্যাঞ্চলে।
রাজনীতি ছিল, রাজনীতি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশে যখন কোনো সংকট দেখা দেয়, তখন উচিত দলমত নির্বিশেষে সবার এক হয়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। কে আগে গেল, কে পরে গেল সেটা বেশি জরুরি না। কারা আগে গিয়ে মানুষকে সাহায্য করেছে সে জন্য এখন আর আমরা যাব না- এই ধরনের মানসিকতা বদল করা দরকার। বা মিডিয়ায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বক্তৃতাবাজি করে সোচ্চার হয়ে নিজেদের ঢাকঢোল পেটানোর মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ রাজনীতি যদি মানুষের জন্য, তা হলে তো মানুষই আগে। সেই মানুষ যখন যেকোনো সংকটে পড়ে তখন তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। আর সবকিছু তখন গৌণ।
আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা আসলে কি করতে পারি? তারা কি এই রাজনীতিবিদদের কথার ফুলঝুরি শুনে বসে থাকব? আমাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা ভালো। যারা এই দুর্গত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারি। আর যাদের সে সামর্থ্য নেই তারা বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য বিত্তবানদের কাছে গিয়ে হাত পাততে পারি। হাত তো আর নিজের জন্য পাতছি না। গরিব অসহায় মানুষের জন্য পাতছি। বিত্তবানদের একটু হাত খোলা সাহায্য ওই সব বন্যার্তর জন্য অনেক বড় উপকারে আসবে। বিশেষ করে এই দুর্যোগের সময়। যে শিশুটি দুদিন ভালো খেতে পায়নি, তার জন্য একটু ভাত ডালের ব্যবস্থা যদি করা যায় সেটা অনেক বড় ব্যাপার। যে বয়স্ক মানুষটি তিন দিন আধপেটা খেয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ার ঘরটির দিকে, তার কাছে এই সময় মাত্র দুই হাজার টাকাও অনেক বড় ব্যাপার।
সমাজের অনেক বিত্তবান আছে যাদের অনেকে একবেলা বাইরে খেতে গিয়ে পাঁচ-দশ হাজার টাকা খরচ করতে দ্বিধা করে না। তারা একটু এগিয়ে এলেই আমাদের রাজনীতিবিদদের ক্ষমতায় যাওয়া আর ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য যেসব কথাবার্তা বলে চলেছে প্রতিনিয়ত, তা শোনার দরকার পড়বে না। তারা থাক সাপলুডু খেলায় মত্ত।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে জানা গেছে, আর যদি বৃষ্টিবাদল না হয়, তা হলে বন্যার ছোবল থেকে দেশ রক্ষা পাবে। ভাল কথা। তাই যেন হয়। কিন্তু বন্যা তো চলে গেল। বন্যার পরবর্তী ধকল থেকে কীভাবে রেহাই পাবে অসহায় মানুষগুলো!
বিশুদ্ধ পানি থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি তৈরির জন্য সাহায্য পাবে কোথা থেকে? আমরা যদি মনে করি বন্যা শেষ আর সাহায্য লাগবে কেন? তা হলেই ভুল করা হবে। সরকার-বিরোধী দল বা রাজনীতিবিদরা কী করবে সেদিকে না তাকিয়ে থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই অমর বাণীর (তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো, শত্রুর মোকাবিলা করবার জন্য) সুরেই অন্যভাবে বলি, যার যা সামর্থ্য আছে তা এক করে বন্যার্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই। বন্যা পরবর্তী ধকল থেকে যেন সহজেই পরিত্রাণ পায় সেসব অসহায় মানুষ, সেজন্য একটু যেন সচেতন থাকি।