অনলাইন ডেস্ক: | ০৪ আগস্ট ২০১৭ | ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় খামারিদের দুধের সঠিক দাম না দেয়া, জেনারেটর সরিয়ে ফেলা, খামারিরা দুধ না দেয়া, দুধ শীতলকরণ যন্ত্র (কম্প্রেসার) বিকল থাকায় বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডের ‘শ্রীপুর দুগ্ধ শীতলীকরণ কারখানা’ উদ্বোধনের দুই বছর পরেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখন বসে বসেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন সমবায় অধিদপ্তর পরিচালিত মিল্কভিটার এ শাখা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কৃত্রিম প্রজননকারী মো. শফিউল্লাহ বলেন, শ্রীপুর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নসহ ৮টি ইউনিয়নের দুগ্ধ খামারিদের দুধ বাজারজাতের সুবিধার লক্ষ্যে ৪৮টি দুগ্ধ সমবায় সমিতির মাধ্যমে এক হাজার ৪৫০ জন সদস্যের কাছ হতে প্রাথমিক অবস্থায় দুধ সংগ্রহ করা হলেও উদ্বোধনের কয়েক বছর পর বিভিন্ন সমস্যা ও দুধ সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কার্যক্রম। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরামা গ্রামে নির্মাণ করা হয় দুগ্ধ শীতলীকরণ কারখানা। এর দুধ ধারণক্ষমতা রয়েছে ১৫শ’ লিটার। ফলে বন্ধ থাকা এই প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একরকম বসে বসেই বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।
সমবায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেন্টুফেস নামক যন্ত্রের মাধ্যমে দুধে ফ্যাটের উপস্থিতির দাম নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু খামারিদের দুধে ফ্যাট নেই বলে দাম কম দেয়ায় তারা এখন আর ওই প্রতিষ্ঠানে দুধ দিচ্ছেন না।
প্রকল্পের সুপারভাইজার দিদারুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় বাজারগুলোতে ইতিপূর্বে দুধের দাম বেশি থাকায় খামারিরা মিল্ক ভিটার এই প্রকল্পে দুধ দিতে আগ্রহী হয়নি। বর্তমানে দাম কমে গেলে সমবায়ীরা দুধ দিতে চাইলেও শীতলীকরণ যন্ত্রের কম্প্রেসারটি অকেজো থাকায় আমরা তা নিতে পারছি না। এ ছাড়া ফার্মকুলার মেশিনটিও নষ্ট থাকার ফলে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি গত বছরের মে মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে অবহিত করলেও তারা কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। তিনি আরও বলেন, এখানে হিসাবরক্ষক, ল্যাব টেকনিশিয়ান মিলে নয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু এখানে তিনিসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন পাঁচজন। তিন কর্মীর মধ্যে দুজনকেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যাদের প্রত্যেককে ২৭৬ টাকা করে দৈনিক হাজিরা দেয়া হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। তাদের মধ্যে তিনজনকে দৈনিক আট ঘণ্টা করে চবি্বশ ঘণ্টা নিরাপত্তার কার্যক্রম দেখতে হয়।
দিদারুল ত্রিশালের প্লান্টেরও দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা যায়, মাঝে মধ্যে তিনি শ্রীপুর প্লান্টের খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাবদ প্রতিমাসে অর্ধকোটিরও বেশি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিনজনের মধ্যে অফিসে মূলত উপস্থিত থাকেন দুজন নিরাপত্তা কর্মী। কর্মকর্তাদের দেখা মেলে মাস শেষে বেতনের সময় হলে এমন অভিযোগ ওই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের।
এ ব্যাপারে সহকারী ব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত) মাহমুদ হাসান রাজীব বলেন, কারখানার বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে পত্রের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে, ফ্যাটের অজুহাতে দুধের দাম কম দেয়া হয় বলে যে অভিযোগটি করা হয়েছে তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, স্থানীয় বাজারে দুধের চাহিদা বেশি থাকা ও দাম ভালো পাওয়ায় সমবায়ীরা এই প্রকল্পে দুধ দিতে চান না। তবে খুব শিগগির দৈনিক ৫০০ লিটার দুধ সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে এই প্লান্টটি চালু করা হবে বলে জানান তিনি।