আজকের অগ্রবাণী ডেস্ক | ১২ আগস্ট ২০১৭ | ১:০৮ অপরাহ্ণ
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ কর্মকর্তারা সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অপ্রকাশিত একটি জরিপের বরাত দিয়ে বলছেন, বাল্যবিবাহের হার কমেছে। তবে ওই জরিপের খসড়া প্রতিবেদন ঘাঁটলে দেখা যায়, সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে, তাদের তথ্য দিয়ে বাল্যবিবাহের হার মাপা ঠিক হবে না।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল—ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় করা ‘অ্যাসেসমেন্ট অন কভারেজ অব বেসিক সোশ্যাল সার্ভিসেস ইন বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশে মৌলিক সামাজিক সেবা কাভারেজের মূল্যায়ন) শীর্ষক জরিপটি সরকারের বিভিন্ন সেবার কার্যকারিতা বোঝার জন্য করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) যৌথভাবে এ জরিপ করেছে।
এখানে জরিপভুক্ত পরিবারগুলো সম্পর্কে সাধারণ তথ্যের অংশ হিসেবে মেয়েদের বিয়ের বয়সের একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। জরিপভুক্ত দুই লাখ পরিবারের বিবাহিত নারীদের কাছে তাঁদের বিয়ের বয়স জানতে চাওয়া হয়। শুধু এই একটি প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতেই এ ধারণা দেওয়া হয়। এভাবে জরিপে বলা হয়েছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ৩৫ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগে। এই বয়সীদের ৬ দশমিক ২৫ ভাগের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সের আগে। গত বছরের মে থেকে জুলাই মাসে মাঠ পর্যায়ে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
এসব হিসাব উপস্থাপন করার পর জরিপের খসড়া প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাল্যবিবাহের বিদ্যমান হার হিসাব করার জন্য এই তথ্য ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ, জরিপের প্রশ্নপত্রে বাল্যবিবাহের ধারা পুরোপুরি বোঝার উপযোগী প্রশ্ন ছিল না। সে জন্য এর তথ্য বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত যথাযথ কোনো জরিপের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের বাল্যবিবাহ-সংক্রান্ত এ তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বক্তব্যও দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) মেহের আফরোজ রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ইমেজ প্লাস প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, বাল্যবিবাহ ১৩ শতাংশ কমে এসেছে।
ইউনিসেফের জেন্ডার উপদেষ্টা এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কর্মসূচির ফোকাল পয়েন্ট রোশনী বসু বলেন, অপ্রকাশিত এ জরিপটি টিকাদান, জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকের অবস্থান জানার জন্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান বাল্যবিবাহের হার নির্ধারণের জন্য এ জরিপ করা হয়নি। তবে এর থেকে পাওয়া পরিবারের বৈশিষ্ট্যগুলোর তথ্য অনুযায়ী বাল্যবিবাহ কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এখন জাতীয়ভাবে পরিচালিত গুচ্ছ জরিপের মতো কোনো জরিপ করে বর্তমান হার সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন।
এর আগে ২০১৫ সালে ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের করা বহুমাত্রিক সূচক নির্ধারণে পরিচালিত গুচ্ছ জরিপ—মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) বা জরিপের ফল অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫২ শতাংশ নারীর ১৮ বছর পার হওয়ার আগেই বিয়ে হয়েছে। আর ১৫ বছর পার হওয়ার আগে বিয়ে হয়েছে ১৮ শতাংশের। এত দিন সরকারিভাবে ৫২ শতাংশকেই বাল্যবিবাহের সর্বশেষ পরিসংখ্যান হিসাবে ধরা হতো।
২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড গাল৴সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নিচের বাল্যবিবাহকে শূন্য করা, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী নারীর বাল্যবিবাহের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ পুরোপুরি নির্মূল করার অঙ্গীকার করেছেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম বলেন, ‘বাল্যবিবাহের হার কমে আসছে এবং আগের চেয়ে বর্তমানে কমে আসার মাত্রা দ্রুত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমানে অপ্রকাশিত যে জরিপ নিয়ে কথা হচ্ছে, তাতেও বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমে আসছে এবং তা গ্রহণযোগ্য। চলতি বছরে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে একটি নতুন আইন করলাম, আর তারপরই বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমে গেল, বিষয়টি তেমন নয়। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তারই প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে।’
তবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলছেন, বাল্যবিবাহ দ্রুতগতিতে কমার যে প্রবণতার কথা বলা হচ্ছে, তা বিশ্বাসযোগ্য না। বাল্যবিবাহের হার আসলেই কমেছে কি না, কমে থাকলে কোন কোন কারণের জন্য কমছে, তা আরও যাচাইবাছাই করা দরকার।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্য নিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করছে, তাতে বলা হয়েছে, গত সাত মাসে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে ১১৬টি। অথচ গত পুরো বছরে ১১৭টি ঘটনার কথা খবরে এসেছে।