সিরাজুল ইসলাম | ২৯ জুলাই ২০১৭ | ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ
রাজধানীর সবুজবাগ থানা পুলিশের তালিকাভুক্ত মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি ময়না বেগম (৩৩)। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রেতাদের বিশাল সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেয়ায় তার খ্যাতি হয় ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’।
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার নামে মাদকের বেশ কয়েকটি মামলা আছে। সবুজবাগ থানাতেই আছে চার-চারটি মামলা। এসব মামলায় ময়নাকে গ্রেফতারে প্রায় দুই বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। কিন্তু অভিনব কৌশল অবলম্বন করে সে গ্রেফতার এড়িয়ে যায় বারবার।
বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে নির্বিঘ্নে ভেতর দিন কাটত তার। কিন্তু এবার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটিই কাল হল তার। অবশেষে মঙ্গলবার বিকালে তাকে সবুজবাগের ওহাব কলোনি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সবুজবাগ থানার ওসি আবদুল কুদ্দুস ফকির জানান, ময়না বেগম দুর্ধর্ষ ও সুচতুর মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসায় সিদ্ধহস্ত ময়নাকে গ্রেফতার করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ৫০ পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশন (প্যাথেডিন) উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের কাছে খবর ছিল, তার কাছে মাদকের একটি বড় চালান আছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ময়না হয়তো সেই চালান সরিয়ে ফেলেছে। তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ময়না ওই চালানের কথা অস্বীকার করেছে।
ময়নাকে গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া এসআই বাবুল সরকার যুগান্তরকে জানান, নেশার জগতে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ চম্পার পর পরই অবস্থান ময়নার। সে মাদক কেনাবেচা করে সবুজবাগের ওহাব কলোনিতে তিনতলা বাড়ি বানিয়েছে। তার স্বামী মিন্টু মিয়া ওরফে মন্টুও একজন মাদক ব্যবসায়ী। কয়েকটি মামলার পলাতক আসামি মন্টুকে ধরতেও পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
এসআই বাবুল সরকার জানান, ময়না তার বাড়িতে নিয়মিত থাকে না। মাদক কেনাবেচার কাজে নারায়গণগঞ্জের সোনারগাঁসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থাকে। যখন সে ওহাব কলোনিতে আসে তখন তার কক্ষে বাইরে থেকে তালা লাগানো থাকে। তাই পুলিশ গ্রেফতার করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে বারবার ফিরে আসে।
এবার তাকে আইনের আওতায় আনতে পর্যাপ্ত সোর্স নিয়োগ করা হয়। বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকালে তার বাড়িটি পুলিশ ঘিরে ফেলে। পাশাপাশি ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার তিনটি গলিও ঘিরে রাখে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হলে এসআই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
বুধবার তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মামলার বাদী এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ময়নাকে গ্রেফতার করতে তার বাসায় যাওয়া হলে অন্যবারের মতো এবারও তার রুমে বাইরে থেকে তালা দেখা যায়। পাশের রুমে তার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে মনিকা ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া বাঁধনকে দেখা যায়। তাদের মা কোথায় আছে জানতে চাইলে তারা পুলিশকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি। তারা মায়ের খবর জানে না বলে জানায়। পাশের তালাবদ্ধ রুমের চাবি চাইলে তারা তা দিতে টালাবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে তালাবদ্ধ রুমের ভেতর থেকে মোবাইলের শব্দ শোনা যায়। তখন পুলিশ নিশ্চিত হয়, ওই রুমেই ময়না অবস্থান করছে। পরে থানায় খবর পাঠিয়ে নারী পুলিশ আনা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় টেম্পোস্ট্যান্ড থেকে তালাচাবিওয়ালা ডেকে এনে তালা ভাঙ্গা হয়। ঘরে ঢুকে মাদকসহ ময়নাকে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শুকদেব বিশ্বাস জানান, বুধবারের মামলা ছাড়াও সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানায় ময়নার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে সেসবের কয়েকটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য মামলাগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
এসআই শুকদেব জানান, ২ জুন খিলগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছিল। গত বছরের ২৮ জুন এবং ৩০ মার্চ তার বিরুদ্ধে সবুজবাগ থানায় পৃথক মাদকের মামলা হয়। এছাড়া একই থানায় ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর দায়ের করা একটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।