আজকের অগ্রবাণী ডেস্ক | ১১ আগস্ট ২০১৭ | ৮:৪৫ অপরাহ্ণ
সানি আলম ৮ম শ্রেণির ছাত্র। দরিদ্র রিক্সা চালকের ছেলে। তবে বাবা মার স্বপ্ন পূরণের অভাব অনটনে থেকেও পড়ালেখায় মনযোগী। এর মধ্যে একই স্কুলের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ধনীর মেয়ে জ্যোতির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ক্লাসের বাইরে খেলার সাথীও। তবে বন্ধুত্বের শুরু থেকেই ধনীর মেয়ে বলে দুরে থাকতেই চেষ্টা করে সানি। কিন্তু এরমধ্যে জ্যোতির পরিবার জানতে পেরে সানিকে স্কুল থেকে ফেরার পথে জোর করে মুখ বেঁধে মোটরসাইকেলে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়।
সেখানে আগে থেকেই মদ্যপান অবস্থায় আরো দুইজন প্রস্তুত ছিলো। মোটর সাইকেল থেকে নামাতেই দুই মাতাল হাতে থাকা মদের বোতল সানির মাথায় ভাঙ্গে। শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতন। হাত আর মুখ বেধেঁ লোহার রড় দিয়ে হাতে পায়ে পুরো শরীরে পেটানো হয়। এখানেই শেষ নয়।
চুরির অপবাদ মেনে নিতে না চাইলে প্লাস দিয়ে পায়ের নখ উপড়ে ফেলে সানির। এমনকি স্ক্রু দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে পাষন্ডরা। খবর পেয়ে ছেলে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে বাবা গিয়ে অনেক কাকুতি মিনতি করে। কিন্তু ছেলে না ছেড়ে বাবাকেও লোহার রড দিয়ে বেদম মারধর করে ফেলে রেখে চলে যায় জ্যোতির স্বজনরা। আবার অপরাধীরা নিজের বাঁচাতে সানির বিরুদ্ধে চুরির নাটক সাজিয়েছে।
সিনেমার মতো এই ঘটনা ঘটেছে আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকর হাউজিং সোসাইটিতে এমন ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে। আজ দুপরে পুলিশ এ ঘটনার সাথে জড়িত মেয়ের চাচাকে আটক করে নিয়ে আসে পুলিশ। তারপর থেকে প্রকাশ্যে চলে আসে নির্যাতনের ঘটনা।
নির্যাতিত স্কুলছাত্র সানি আলম বলেন, গত কয়েকমাস আগে মেয়েটির সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। বিষয়টি মেয়ের চাচা কিবরিয়ার নজরে আসে। গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে বাসায় ফেরার পথে মোটরসাইকেলে নিয়ে যায় সুজয় নামের এক ব্যক্তি। পরে নিয়ে যাওয়া হয় কুরগাও এলাকার হাউজিং সোসাইটির একটি পরিত্যক্ত অফিস কক্ষে। সেখানে দরজা বন্ধ করে হাত ও মুখ বেধেঁ ফেলে। পরে তার মাথায় দুটি মদের বোতল ভেঙে ফেলে সুজয় ও কিবরিয়া নামের দুই ব্যক্তি। পরে তারা রড ও লোহার পাইপ দিয়ে চার ঘণ্টা আটকিয়ে রেখে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে।
এসময় তাদের সাথে আরো একজন যোগ দেয়। কোন কিছু না নিলেও তারা আমার কাছে চুরি করা ৩ভরি স্বর্ণ ও ৫০হাজার টাকা ফেরত চায়। পরে তারা স্থানীয় ইউপি মেম্বার শফিউল ইসলাম সোহাগের অফিস কক্ষে নিয়ে চোরের অপদায় দিয়ে একটি লিখিত জবানবন্ধি নেয়। পরে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে মেম্বার। কিন্তু আমি চুরি না করেও আমাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে তারা।
সানির বাবা সানাওল্লাহ জানান, সন্ধ্যায় ছেলে বাড়িতে ফিরে না আসলেও খোজাঁখুজি করি। পরে জানতে ছেলেকে পাশের বাড়ির কিবরিয়াসহ আরো কয়েকজন তাকে তুলে নিয়ে গেছে। এসময় লির্বার্টি নামের এক অফিসে গিয়ে সানিকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় দেখতে পায়। সেখানে নিয়ে সানিকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে ছেলে চুরি করেছে বলে তাকে মারা হয়েছে বলে জানান কিবরিয়া। এসময় প্রতিবাদ করলেও স্টিলের পাইপ দিয়ে আঘাত করে। আর এ ঘটনা বাহিরে জানালে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এরপর থেকে পরিবার নিয়ে জীবন ঝুকিতে রয়েছি।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পূর্বপশ্চিমকে জানান, আমরা আহত স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতাল কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় অভিযুক্ত কিবরিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তাছাড়া কি কারণে তাকে মারা হয়েছে সে বিষয়টি তদন্ত ছাড়া বলা যাবে না। এঘটনায় জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।
নির্যাতিত সানি আলম জামালপুর সদর থানার নাঙলজোড়া গ্রামের সানাওল্লাহর ছেলে। সে স্থানীয় প্রফেসর আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।