ফারুক আহম্মেদ (জাপানী ফারুক) | ২২ জুলাই ২০১৭ | ১২:২৩ অপরাহ্ণ
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আতঙ্কে ভুগছে রাজধানীর দেড় কোটি মানুষ। অতি সম্প্রতি ডেঙ্গু আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে যূথবদ্ধভাবে। ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়ার জীবাণু ছড়ায় এডিস মশা। দুই জ্বরের মধ্যে সামঞ্জস্যও রয়েছে। একসময় এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু ভাইরাস জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।
২০০৮ সালের প্রথম দিকে দেশে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়ে। আট বছর ধরে এ ভাইরাস নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্চ্য না হলেও তিন মাস আগে তা থাবা বিস্তার শুরু করে জোরেশোরে। এ সময়ে রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, চিকুনগুনিয়ার মূল উপসর্গ জ্বর ও অস্থিসন্ধির ব্যথা। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে গায়ে লাল দানার মতো দেখা দেয়। পাশাপাশি মাথাব্যথা, চোখ জ্বালা, অবসাদ, অনিদ্রা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। জ্বর সাধারণত দুই থেকে পাঁচ দিন থাকে এবং এরপর নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে জ্বর চলে যাওয়ার পরও তীব্র অবসাদ এবং ব্যথা কয়েক সপ্তাহ এমনকি কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার কোনো প্রতিষেধক নেই। এর চিকিৎসা মূলত রোগের উপসর্গগুলোকে নিরাময় করা। রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে এবং প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল খেতে দিতে হবে। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাক্সিন বা টিকা নেই। তাই প্রতিরোধই হলো সবচেয়ে কার্যকর উপায়। আতঙ্কিত হওয়া নয়, দুই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস জ্বর কয়েক সপ্তাহের জন্য আক্রান্তদের কর্মক্ষমতা যে কেড়ে নিচ্ছে তা এক বাস্তবতা। বিপদ এড়াতে এডিস মশা থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখা সবার জন্যই জরুরি। মশা নিধনের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় রাজধানীতে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর ভাইরাস ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ায়, সেহেতু দিনে যাদের ঘুমানোর অভ্যাস তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশা যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে সেহেতু বাড়ি বা ঘরের ফুলের টব বা কোনো পাত্রে স্বচ্ছ পানি যাতে একাধিক দিন উন্মুক্ত অবস্থায় না থাকে সে ব্যাপারে থাকতে হবে সতর্ক।
রাতে মশা দিনে মাছি এই নিয়ে ঢাকায় আছি— এটি ছিল চার যুগ আগের একটি সুপ্রচলিত প্রবচন। মাছির উৎসাদন স্থল সীমিত হয়ে পড়ায় ঢাকায় মাছির উপদ্রুব এখন অনেকটাই সীমিত। তবে মশার দৌরাত্ম্য যেন দিন দিন বাড়ছে। মশা মারার জন্য ওষুধ ছিটানো হলেও তাতে মানুষ কাহিল হলেও কাবু হয় না বেপরোয়া মশা। মশার ওষুধের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ায় হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সার, ফুসফুস, কিডনিসহ নানা রোগের বিপদ বাড়ছে। মশার ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর মান ও প্রয়োগ নিয়েও বাড়ছে সংশয়। সন্দেহ নেই, মশা নিধনে সরকার ও দুই সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। কিন্তু সে প্রয়াসের সুফল কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। গত সাত দশকের ইতিহাসে ঢাকার নির্বাচনী রাজনীতিতে মশার উৎসাত সব সময় ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে। ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মশার মূককীট নিধনে রাজধানীর বিভিন্ন ডোবা ও ড্রেনে বিদেশ থেকে আমদানি করা গাপ্পি মাছ ছেড়ে চমক সৃষ্টি করেন।
মশক নিধনে দুই সিটি মেয়রের আন্তরিকতা নিয়ে কারোর প্রশ্ন না থাকলেও বাস্তবায়ন পর্যায়ে অভিযোগের শেষ নেই। মশা নাশক ওষুধ কেনা এবং বিতরণে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকির অভিযোগ। নগরবাসীর স্বস্তি নিশ্চিতকরণে মশক নিধন কার্যক্রমের সর্বস্তরে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। লুটেরাদের যে কায়েমি স্বার্থবাদ উত্তরাধিকার সূত্রে দুই সিটির ঘাড়ে চেপে বসেছে তা নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই মেয়রকে উদ্যোগী হতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা বাড়াতেও নিতে হবে উদ্যোগ।
লেখক : সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটি, সাধারণ সম্পাদক জাতীয় শ্রমিক লীগ আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটি ও সহ সভাপতি বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ।