অনলাইন ডেস্ক | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৮:০৬ অপরাহ্ণ
গত মাসের (আগস্ট) শুরুর দিকে ছোট আকারের ইলিশ মাছের কেজি ছিল ৯০০ টাকা। এসব ইলিশের এক-একটির ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম। এখন একই টাকায় মিলছে দেড় কেজি ইলিশ মাছ! তবে মাছের আকার ও ওজন বাড়লে ইলিশের দামও বাড়ে। বড় আকারের ইলিশের দামে খুব বেশি পার্থক্য হয়নি। গত মাসের তুলনায় দাম কমেছে এক শ থেকে দেড় শ টাকা।
পলাশী কাঁচাবাজারে মাছ বিক্রি করেন মো. হৃদয় ঢালী। এক ক্রেতাকে লোভ দেখিয়ে বললেন, ‘একটার দামে দুইটা ইলিশ লইয়া যান।’ কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, একটি বড় ইলিশ মাছের দামে দুটি ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি করছেন তিনি। ৬৫০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ মাছ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর ৯৫০ গ্রামের একটি ইলিশ মাছের দাম চাইছেন ৯০০ টাকা।
বিক্রি কেমন, জানতে চাইলে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে হৃদয় ঢালী বলেন, ‘পত্রপত্রিকায় লেখা হয় মাছের দাম কম। কিন্তু যারা মাছ ধরে, তারা ক্যামেরার সামনে এক কথা কয়, আর আমগরে কয় আরেক। আমাগো বেশি দামেই কিনতে হয়। কিন্তু বাজারে যারা কিনতে আসে তারা কয়, দাম তো কম! এহন আমগোরেও কম দামে বেচতে হয়। ঈদের পরে তো কাস্টমারও নাই।’
আজিমপুরের বাসিন্দা মার্জিয়া আক্তার বলেন, ‘ঈদের কয়দিন কোরবানির গোশতই খাওয়া হয়েছে। এখন স্বাদ পরিবর্তন করতে মাছ কিনতে আসলাম। ইলিশ কিনব ভাবছি, দাম তো একটু কম।’
পলাশী কাঁচাবাজারে খুব বেশি মাছের দোকান খোলা ছিল না। সেখানে রুই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায়। মলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। ছোট আকারের কুচো চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০ টাকায়। মাছ বিক্রেতা শোয়েব খান মানিকগঞ্জ থেকে মাছ কিনে আনেন। জানালেন, গত মাসের তুলনায় দামের কম-বেশি হয়নি। একই রকম আছে।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে অবশ্য বিক্রি নিয়ে এত হাঁ-হুতাশ নেই। বিক্রেতা আবু তালহা বললেন, সকাল থেকে মোটামুটি বিক্রি হয়েছে। ক্রেতা একদম নেই, তা বলা যাবে না। তিনি রুই মাছ বিক্রি করছেন ৩৫০ টাকা কেজি দরে। এক কেজি রুপচাঁদা বিক্রি করছেন ৮০০ টাকায়। দেশি চিংড়ি বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়। বাগদা চিংড়ির দাম পড়ছে ৫০০ টাকা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ফয়সাল হোসেন। তিনি এসেছিলেন মলা মাছ কিনতে। কিন্তু এখন চোখ গেছে ইলিশের দিকে। গিন্নির সঙ্গে মোবাইলে পরামর্শ করে শুরু করে দিলেন দর-দাম। মাঝারি আকারের ৬০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ মাছ কিনলেন ৪০০ টাকায়। ফয়সাল বলেন, ‘ইচ্ছে করেই কম কিনলাম। ফ্রিজে বেশি জায়গা নেই।’
নিউমার্কেটের মাছের বাজারে দোকানই খোলা ছিল গুটিকয়েক। ক্রেতা আরও কম। মো. নয়ন সকাল থেকে মাত্র ৮টি ইলিশ বিক্রি করেছেন। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ সাড়ে ৩০০ টাকাতেই বিক্রি করে ফেলছেন তিনি। নয়ন বললেন, চট্টগ্রাম থেকে আসা ইলিশের দাম কম। কিন্তু বরিশাল বা চাঁদপুর থেকে যেসব ইলিশ মাছ আসছে, সেগুলোর দাম বেশি। বড় আকারের এসব ইলিশের কেজি এখনো হাজার টাকার ওপরে।
নিউমার্কেটে পাবদা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকায়। বড় আকারের কই মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে ছোট আকারের শিং মাছের কেজি পড়ছে ৩০০ টাকা।
কারওয়ান বাজারে মাছের দাম অন্যান্য বাজারের তুলনায় কম। এখানে ছোট আকারের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। বড় রুইয়ের দাম পড়ছে ৩০০ টাকা। পাবদা মাছের কেজি ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি মাগুর মাছ ৫০০ টাকা। এই বাজারে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছের হালি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। ৬৫০ টাকায় মিলছে ৮০০ গ্রাম ওজনের এক-একটি ইলিশ।
সুপারশপগুলোতে ইলিশের দাম একটু বেশি। রাইফেলস স্কয়ারের আগোরাতে এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৩৭০ টাকায়। আর আধা কেজির ইলিশের দাম ধরা হয়েছে ৩৯৫ টাকা। আগোরার শাখা ব্যবস্থাপক রাশেদ কবির বলেন, নিজস্ব গ্রেড বা মান অনুযায়ী মাছ বিক্রি করা হয়। এগুলো সমান ওজনের হয়। সেই অনুযায়ীই দাম নির্ধারণ করা হয়।
কলকাতার সোদপুরের নাটাগড় বাজারে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি দেড়শ’ রুপিতে। বড়গুলো দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ রুপি। শুধু শহরতলীই নয়, খোদ কলকাতার মানিকতলা বাজার, দমদম নাগেরবাজার, বেহালা চৌরাস্তার বাজার, নিউমার্কেট বাজার, পার্ক সার্কাস বাজার, খিদিরপুর, লেকমার্কেট, যাদপুর এইট-বি বাজারে ইলিশের গড় দাম কেজি প্রতি দেড়শ’ থেকে তিনশ’ রুপি।
বাজারগুলোতে পুঁটি মাছের চেয়েও এবার সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ মাছ। সেখানকার বাজারগুলোতে পুঁটি মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ রুপিতে। অন্যদিকে আকার বুঝে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ৩০০ রুপিতে। বিক্রেতারা স্লোগান দিচ্ছেন- ‘দেড়শ’য় খান ইলিশ। ইলিশ মাছ দেড়শ’ । সস্তায় খান, ইলিশ খান।
ইলিশের সামনে অন্য মাছগুলো যেন অনেকটা অসহায়ের মতো অবস্থা। মাছের পাত্রে চোখ বুঝে পড়ে রয়েছে রুই, কাতলা, বোয়াল, ভেটকি, চিংড়ি, পুঁটিসহ নানান রকমের মাছ।
ইলিশ বিক্রেতারা জানান, ‘প্রতিদিন নামখানা, বকখালি, রায়দীঘি, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার, মেদেনীপুর ও দিঘায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। টনকে টন ইলিশ ছড়িয়ে পড়ছে গোটা রাজ্যে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও যে ইলিশের দাম ছিল পাঁচশ’ থেকে সাতশ’ রুপি সেই ইলিশ এখন মাত্র দেড়শ’ থেকে তিনশ’তে বিক্রি হচ্ছে।’