
তারিকুল ইসলাম | মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০ | প্রিন্ট
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব মোঃ শহীদুল ইসলাম বেলায়েত। যিনি ১৯৫৪ সালে উপজেলার গোপিনাথপুরের সম্ভ্রান্ত মিয়া পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পিতা মরহুম আব্দুল মজিদ মিয়া, মাতাঃ মরহুমা আকিমুননেছা। মোঃ শহীদুল ইসলাম বেলায়েতের শৈশব কুমার নদের ঘোলা জলে কাটলেও পিতৃ মাতৃহীন কৈশর ও যৌবন কাটে বড় ভাইয়ের চাকুরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলায়। তারুন্যের পথ চলা শুরু হয় মুজিব আদর্শ নিয়ে, যা তিনি এখনও হৃদয়ে লালন করেন। জামালপুর জেলায় কর্মজীবনের শুরু থেকেই তিনি প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহ আল মামুনের সান্নিধ্যে আসলে তার পরিবারের সঙ্গে সু সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি মঞ্চ নাটকের আলোক নিয়ন্ত্রণ শব্দ সংযোজন ও প্রক্ষেপনের উপর তালিম নেন এই গুণী নাট্য জনের কাছ থেকে। নাট্যকর্মী হিসাবে জামালপুরের আরেক প্রখ্যাত অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের সাথে আত্মিক সম্পর্ক ছিল। সেই থেকে নাটক ও অভিনয় তার শরীর ও মন জেকে বসে। ১৯৮১ সালে জামালপুরের মায়া ত্যাগ করে নাড়ীর টানে ফিরে আসেন মুকসুদপুরে। মুকসুদপুরের শিল্প সাংস্কৃতি অঙ্গন তখনও ছিল পুরনো ধাচের। ৭১ পরবর্তিতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আমূল পরিবর্তনের কোন ছোঁয়াই তখনও মুকসুদপুরে পড়েনি। হুজ্জাত হোসেন লিটু, ওহিদুল ইসলাম, মজিবর রহমান সহ আরো কিছু উৎসাহী যুবকদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বহুরূপী নাট্য গোষ্ঠী।
উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পকলা একাডেমি মূলত তার উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত হয়। তার নাট্য জীবনের শুরু এখান থেকেই। নৈতিক চরিত্র অবক্ষয়ের এক ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮৪ সালে এলাকার যুব সমাজ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত বহুরূপী নাট্য গোষ্ঠি সপ্তাহব্যাপী নাট্য উৎসবের আয়োজন করে। তার প্রথম রচিত ও পরিচালিত ” মুর্শিদ পথ দেখাও” নাচকটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসে। এরপর আর শহীদুল ইসলাম বেলায়েতকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। বহুরুপী নাট্য গোষ্ঠির এইসব পরিবেশনা মুকসুদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক নতুন মহাযোগ করে দিলো। মামুনুর রশিদের বিখ্যাত নাটক ” ওরা কদম আলী” তিনি প্রথম পরিচালনা করেন মুকসুদপুরের মঞ্চে। শহীদুল ইসলাম বেলায়েতের ২ য় নাটক ” ময়না উত্তর চায়” নতুন মাত্রায় মঞ্চস্থ হয়। জেলা নাট্য উৎসবে বহুরুপী নাট্যগোষ্ঠীর অবস্থান শীর্ষে উঠে আসে। উপজেলায় নিয়মিত নাট্য উৎসবের আয়োজন করে বহুরুপী নাট্যগোষ্ঠী। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত শহীদুল ইসলাম বেলায়েত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন, পাশাপাশি তিনি ডজন খানেক নাটক রচনা করেন এবং সে সব নাটক মঞ্চস্থ হয় যা আজও দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে। তার রচিত নাটকগুলি হচ্ছে মুর্শিদ পথ দেখাও, অগ্নীভুক অজগর, ময়না উত্তর চায়, কলির বৃন্দাবন, চলছে গ্রহণের কাল, সমর্পন, প্রতিদিনের একদিন, গাঁজার নৌকা পাহাড় বাইয়া যায়, রূপবানের পালা, অরণ্যে লাবন্যে হাসি, চেতনায় একাত্তর। রুপবানের পালা নাটকটি জেলা সাংস্কৃতিক উৎসবে উপস্থিত দর্শকদের মনে ব্যাপক সাড়া জাগায়। শহীদুল ইসলাম বেলায়েতের নাটক রচনা ও পরিচালনায় আলাদা একটি শৈল্পিক চেতনা কাজ করে। তিনি মঞ্চে সেট নির্মান করেন নিখুত কারিগরের মতো। ঘর-বাড়ী, প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই বাস্তবতাকেও হার মানায়। আজ মুকসুদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যারা আছেন তারা প্রায় সবাই তার শিষ্য। নিজের নাটক ছাড়াও শহীদুল ইসলাম বেলায়েত দেশের প্রখ্যাত নাট্যকারদের যে সব নাটক পরিচালনা করে তার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওরা কদম আলী, দেওয়ান গাজীর কিসসা, এখনও ক্রীতদাস, বিসর্জন, সুবচন নির্বাসন, ইংগিত, ফলাফল নিম্নচাপ সহ বেশ কয়েকটি নাটক। নাটক রচনা, পরিচালনার পাশাপাশি গোটা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে নিজের কর্মক্ষেত্র হিসাবে জড়িয়ে নেন তিনি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেকে উপস্থাপন করেন স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ একজন খাঁটি বাঙ্গালী হিসাবে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি ২০০১ সালে বাঁশরী শিল্পী গোষ্ঠী নামে আরেকটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। মঞ্চ ছাড়াও বেশ কয়েকটি চলচিত্রেও অভিনয় করেছেন এই প্রতিভাবান মানুষটি। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যাবহার করে তিনিই প্রথম মুকসুদপুরে দর্শকদের উপহার দেন “মেঠোপথ” নামক ভিন্ন মাত্রার ভিন্ন আয়োজনে ছুঁয়ে থাকা অনুষ্ঠানটি। তার মেঠোপথ অনুষ্ঠান সম্পূর্ন লোকজ অথচ আধুনিক কলাকৌশল ও শিল্প নির্ভর সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা। সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক। জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক খবর, মাতৃভুমি সহ আরো কয়েকটি সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা করেন। বর্তমানে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিকতা করছেন দীর্ঘকাল। ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সাপ্তাহিক সুবেসাদিক, সাপ্তাহিক মেধা ও বর্তমানে তিনি জাতীয় সাপ্তাহিক বাংলার নয়ন পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত তার রম্যরচনা ” আলতু মিয়ার ফালতু প্যাচাল” যেমন পাঠক নন্দিত হয়েছে তেমনি সমসাময়িক বিবিধ সমস্যাকে পাঠকের সামনে তুলে আনছে। গত ২৪ জুন নাট্যকলায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও গোপালগঞ্জ শিল্পকলা থেকে সম্মাননা পদক পেয়েছেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সন্তান মোঃ শহীদুল ইসলাম বেলায়েত।
সারাজীবন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিলে তিলে। বয়সের ভার তাকে দুর্বল করতে পারেনি একটুও অবসর নেই তার। দর্শকদের কথা ভেবেই সৃষ্টি করে যাচ্ছেন নতুন কিছু। তিনি শারিরিক ভাবে একটু অসুস্থ্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
Posted ১:৪০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০
ajkerograbani.com | shalauddin Razzak
.
.
Archive Calendar