অনলাইন ডেস্ক | ২৬ জুন ২০১৮ | ৪:০২ পূর্বাহ্ণ
নাম তার কোহিতুর। ভাবছেন কোহিনুর হীরার কোন ছোট বোনের নাম বললাম কীনা। না, এটি একটি আমের নাম। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় বিরল প্রজাতির এ আমটি পাওয়া যায়। কলকাতার বাজারে আমটি বিক্রি হয় প্রতি পিস ৭০০ থেকে ১৫০০ রুপি। বলা হয়ে থাকে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দামী আম।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার সময় আমটির জাত উদ্ভাবিত হয়। সেসময় কড়া নিয়ম ছিল শুধু রাজা নবাবরা ছাড়া কেউ ছুঁতে পারবেন না এ আমকে। নবাবী এ আমটির চাষের প্রক্রিয়াও বেশ নবাবী। অষ্টাদশ শতকে নবাবের আমলে প্রথম আবির্ভাব হয় এই রাজকীয় আমের। কারণ এই আম এতটাই সংবেদনশীল যে এটা কাটার সময় তুলার ওপর রেখে যত্ন সহকারে কাটা হয়। না হলে মুহূর্তের মধ্যে গলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গাছ পাকা হওয়ার আগেই পেড়ে ফেলতে হয় এই আম। মুর্শিদাবাদের আম-চাষিদের মতে, গাছ পাকা হয়ে গেলে কোহিতুরের স্বাদ বদলে যায়। তাই স্বাদ ধরে রাখতে হিসেব করে দেড়-দু’দিন আগেই আম পেড়ে ফেলা হয়। ঠিক সেই ভাবেই একে অতি সাবধানে গাছ থেকে পাড়া, পাকানো এবং সংরক্ষণ করা হয়। লাঠির আগায় দড়ির জাল (স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ঠোসা) লাগিয়ে আম পাড়া হয়। কোহিতুরের বেলায় সেই জালের মধ্যে তুলোর প্যাডিং থাকে। নামানোর পরেও তাকে রাখা হয় তুলোর মধ্যেই। যাতে সামান্যতম চোটও না লাগে আমের গায়ে।
এখানেই শেষ নয়। দুই-তিন ঘণ্টা পরপর আমগুলো উল্টে পাল্টে দিতে হয়। যাতে এক দিকে চাপ পড়ে বা এক দিক গরম হয়ে আমের স্বাদ নষ্ট না হয়। কোহিতুর কাটার আগে দুই-তিন ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হয়। কোহিতুর আম কাটাও দেখার মতো পর্ব। দা, কাটারি বা ছুরি দিয়ে নয়, কোহিতুর কাটা হতো বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। এমন ভাবে, যাতে আঁটিতে আঘাত না লাগে। তাতেও নাকি তার স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রথমের দিকে এই আমের ১৪৮টি গাছের সন্ধান পাওয়া গেলেও এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ এ। নয়াদিল্লির জনপথে পশ্চিমবঙ্গের হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যোগে আম উৎসব চলছে। সেখানেই এই দুর্লভ আম প্রদর্শিত হচ্ছে।