অগ্রবাণী ডেস্ক | ২৪ মে ২০১৭ | ৭:৩৯ অপরাহ্ণ
গত ১৬ মে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভারতের হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ব্যাঁটরার মধুসূদন পাল চৌধুরী লেনের বাসিন্দা জয়নারায়ণ পাণ্ডে। তাঁর ডাক নাম জগা। আনুমানিক ৫৫ বছর বয়সি জগাবাবু সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। মঙ্গলবারই হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল, বুধবার তাঁকে ছুটি দেওয়া হবে।
কিন্তু বুধবার সকালে ব্যাঁটরার বাড়িতে থানা থেকে ফোন করে দুঃসংবাদ দেওয়া হল। জগাবাবু আর নেই। মৃতদেহ নেওয়ার জন্য হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয় বাড়ির লোককে। তবে নিয়ম মেনে দেহ ছাড়তে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগবে বলে ধীরে সুস্থে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয় থানা।
সুস্থ রোগীর হঠাৎ কী করে মৃত্যু হল তা ভেবে কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু সবই নিয়তি মেনে নিয়ে সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছন তাঁরা। সঙ্গে শববাহী গাড়ি, ফুল, মালা-সহ শেষকৃত্যের যাবতীয় সরঞ্জাম। সঙ্গে গলায় গামছা ঝুলিয়ে পরিবার, বন্ধুরা মিলিয়ে জনা পনেরো শ্মশান যাত্রী।
দেহ নেওয়ার জন্য তাঁদের মধ্যেই পাঁচ, ছ’জন যুবক হাসপাতালের মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে পৌঁছয়। আর সেখানে গিয়েই ‘ভূত’ দেখলেন তাঁরা। যে জগাবাবুর দেহ নিতে এসেছেন তাঁরা, তিনি যে পায়চারি করতে করতে মুসম্বি লেবু খাচ্ছেন!
এমন দৃশ্য দেখে যে কারও থতমত খেয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্যরত নার্সের কাছে বিষয়টি জানতে চান জগাবাবুর ‘দেহ’ নিতে আসা যুবকরা। অভিযোগ, জীবিত ওই রোগীর ডেথ সার্টিফিকেটও তৈরি করে ফেলেছিল হাসপাতাল। তাতে সই হয়ে গিয়েছিল চিকিৎসকের। কিন্তু নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি ওই ডেথ সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন কর্তব্যরত নার্স। ততক্ষণাৎ ডেথের বদলে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট তৈরি করে ছুটি দেওয়া হয় জগাবাবুকে!
যাঁকে দাহ করবেন বলে হাসপাতালে এসেছিলেন, তাঁকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়ে স্বভাবতই খুশি ওই রোগীর পরিবার। কিন্তু এত বড় ভুল করল কী করে হাসপাতাল? হাসাপাতালের তরফে জানা গিয়েছে, মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের ৭২ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন জগাবাবু। আর তার বেডের সামনেই মেঝেতে এক্সট্রা সিক্সটিন বেডে অজ্ঞাতপরিচয় এক রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে দাবি, সুস্থ হয়ে ওঠায় এ দিন ভোরে ওয়ার্ডের আশপাশেই ঘোরাফেরা করছিলেন জগাবাবু। আর তখনই তাঁর ফাঁকা বেডে উঠে যান মেঝেতে থাকা একস্ট্রা সিক্সটিন বেডের রোগী। ঘটনাচক্রে কিছুক্ষণ পরেই জগাবাবুর বেডে শুয়েই মৃত্যু হয় অজ্ঞাতপরিচয় ওই রোগীর। কর্তব্যরত নার্স বিষয়টি জানান চিকিৎসককে। রোগীকে পরীক্ষা করে ডেথ সার্টিফিকেটে সই করে দেন চিকিৎসক। যেহেতু ৭২ নম্বর বেডেই রোগীর মৃত্যু হয়, তাই অন্য কোনও দিক খতিয়ে না দেখে জগাবাবু বা জয়নারায়ণ পাণ্ডের নামেই ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে যায়। গোটা ঘটনার জন্য কর্তব্যরত নার্সের গাফিলতির দিকেই ইঙ্গিত করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।- এবেলা থেকে।