যশোর ব্যুরো প্রধান : | ০৪ জুন ২০১৭ | ৮:৩৯ অপরাহ্ণ
যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র। একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দেধারছে চলছে মাদক, অস্ত্র বিকিকিনি, চাঁদাবাজি, অপহরন, জুয়া, ছিনতায়, ভুমি দখল, পতিতা বৃত্তি সহ নানা ধরনের অপরাধমুলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব সন্ত্রাসীদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে রয়েছে এলাকাছাড়া। তাদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথাবলার সাহস কারো নেই।
এসব সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের উর্দ্ধোতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী।
সুত্রজানায়, প্রশাসনের মাদক দমনে জিরো টলারেন্সকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাদকের বড় চালান যশোর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছেন তারা। এরমধ্যে বেশকয়েকবার পুলিশের হাতে আটকও হয়েছেন কেউ কেউ। বেজপাড়া মেইন রোড,বিহারী কোলনী,আর এন রোড,সাদেক দারোগার মোড়, তালতলা সহ আশে পাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে এসব নানা ধরনের অপরাধমুলক কর্মকান্ড। পুলিশকে ম্যানেজ করে চক্রের অন্যতম হোতা ওই এলাকার পাভেলের বাড়ির ভাড়াটিয়া মান্নানের ছেলে পান্না ও মানিক এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এছাড়াও তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন শাহা আলমের ছেলে রাকিব, বিএনপি নেতা কাওসারের ছেলে মুরাদ, কামালের ছেলে হিমেল, আসলাম শেখের ছেলে ফরহাদ ও আজাদ, মোস্তর ছেলে আব্দুল্লাহ, বিহারী পাড়া মসজিদের সামনের ইমন সহ এলাকার উঠতি বয়সী কিছু সন্ত্রাসীরা দিনে দুপুরে এসব অপরাধ করে যাচ্ছেন।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা যায়, এসব সন্ত্রাসীদের অধিকাংশের নামে কোতয়ালী মডেল থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। এদের কেউ কেউ আবার গাড়ি চোরাই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে অনেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে নিরীহ মানুষদেরকে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে ছাড়ানোর নামে অর্থবানিজ্য করছেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
অপর এক সুত্র যানায়, কোতয়ালী মডেল থানার কয়েকজন সাব ইন্সপেক্টরের সাথে গভীর আতাত রয়েছে এ চক্রের। তাদেরমধ্যে প্রায়ই এস আই জামিল আহাম্মেদ ওই এলাকায় যেয়ে পান্না-মানিকদের সাথে আড্ডায় মেতে ওঠে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ আড্ডা।
এছাড়াও সাবেক কমিশনার রিয়াজের বাড়ির পাশের চার তলা বাড়ির ৩ তলার একটি ফ্লাট রয়েছে এই চক্রের দখলে। সেখানে দিনভর চলে মাদক সেবন ও জুয়ার আসর। সন্ধা হলেই পতিতাদের এনে ওই ফ্লাটে অপকর্ম চালায় তারা। খোদ্দের আনা গোনার বিষয় এলাকায় জানাজানি হলে ফ্লাট ছেড়ে দেবার জন্য তাদেরকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও তারা ফ্লাট ছারতে নারাজ বলে জানান ওই বিল্ডিং এর মালিক ছামছু ।তিনি আরো জানান, ফ্লাট ছাড়তে বলায় তাকে প্রাণ নাসের হুমকি সহ নানা ধরনের ভয়ভিতী দেখানো হয়েছে।
এদিকে গত ২৯ মে রাতে ওই ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে পতিতা ও খোদ্দের সহ ৬ জনকে আটক করে সদর ফাঁড়ির এস আই বাবুল । পরে তাদেরকে কোর্টে চালান করা হয়। কিন্তু এসব কর্মকান্ডের মুল হোতারা থেকে যায় ধরাছোয়ার বাহিরে।
এদিকে বুনোপাড়া মোড়ের গোলাম মোস্তফার মেয়ে রেশমা আক্তার (২৩) জানান,
সন্ত্রাসী পান্না-মানিকের সহযোগীতায় ফরহাদ, আজাদ, আব্দুল্লাহ, মুরাদ আমাদের বাড়ি দখল করার লক্ষে দির্ঘদিন ধরে আমার ও আমার পরিবারের উপর নানা ধরনের জুলুম নির্যাতন করে আসছে। ইতিমধ্যে তারা আমাকে সহ আমার ভাই ও মাকে কে একাধিকবার খুনকরার উদ্যেশ্যে আমাদের ঘরে ঢুকে জখম করেছে। তার ভাই দিপুকে গত ৮/১১/২০১৬ তারিখে অপহরন করে নিয়ে যায় তারা। পরে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে ভাইকে উদ্ধার করে তারা। তিনি আরো জানান, গত ২০ মে সন্ত্রাসীরা তাদের ঘরে ঢুকে ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং রক্ষিত একটি টিনের মুল্যবান বাক্সে সংরক্ষিত থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা, ৪ ভরি স্বর্নের গহনা , জমির দলিল, তার ও তার ভাইদের জিএসসি, এস এসসি,ও এইচ এসসির সার্টিফিকেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এসব ঘটনার জের ধরে রেশমার অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৮ মে কোতয়ালী মডেল থানায় ফরহাদ, আজাদ, পান্না, মানিক, আব্দুল্লাহ, মুরাদকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয় যার মামলা নং ১৮৪। এ মামলায় ফরহাদ আটক হলেও পান্না মানিক গংদের আটক করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নিতে ভয়ভিতি দেখাচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এদের অত্যাচার থেকে বাচতে প্রশাসনের উর্দ্ধোতণ মহলের সহযোগীতা কামনা করে তিনি।
এদিকে কয়েকদিন আগে তাদের অন্যতম সহযোগী ওই এলাকার ভাংড়ি লিটন ও রুবেলকে মাদক সহ আটক করে পুলিশ। কিন্তু অধরাই থেকে যায় ওই চক্রের অন্যতম হোতা পান্না-মানিক গং।
এ বিষয়ে ওই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। প্রতিনিয়ত তারা আমাদের কাছে এসে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা দাবি করেন। না দিলে অস্ত্রের ভয় দেখায়। তিনি আরো বলেন,শুধু আমি নয় এলাকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পরেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলার সন্তোস দত্ত গ্রামের কাগজকে বলেন, এদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ অভিযোগ আমার কানে আসছে। তিনি আরো বলেন,এলাকার মোড়ে মোড়ে তারা মাদক পয়েন্ট তৈরী করেছে। এরা কারো কথা মানেনা। এলাকার একটি রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এরা প্রতিনিয়ত এলাকার নিরিহ মানুষদের প্রতি অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে ।
এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ওসি আজমল হুদা জানান, আমি ওই এলাকায় সন্ত্রাসীদের উৎপাতের কথা শুনেছি। প্রতিদিন সংঘবদ্ধ পুলিশ ফোর্স তাদের খোজে অভিযান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন কে আটক করা হয়েছে। এবং বাকিদের আটকের জন্য পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।