শাহাদাত হোসেন সেলিম | ১০ জুলাই ২০১৭ | ৯:১৪ অপরাহ্ণ
সাবেক সিনিয়র মন্ত্রী, ৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্র উত্তরণের মহা রুপকার, বিএনপি প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগর যাদু ভাই কে জানাই গভীর শ্রদ্ধা,ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
যাদু ভাই কে প্রথম দেখি ৭৬ সালের ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিলে রাজশাহীতে। “মরন ফাঁদ ফারাক্কা বাঁধ, উড়িয়ে দাও, গুড়িয়ে দাও” শ্লোগান দিতে দিতে আমি তখন মিছিলের সামনের কাতারে।
৭৬ সালের শেষের দিকে “জাতীয় ছাত্রদল” এর দু দিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় যোগ দিতে ঢাকায় এলাম। এস এম হল কেন্টিনের দোতালায় অনুষ্টিত এ সভায় পরিচয় হলো শামসুজ্জামান দুদু,আতাউর রহমান ঢালী সহ আজকের অনেক জাতীয় নেতার সাথে। “আমরা শক্তি আমরা বল, জাতীয় ছাত্রদল” তখন সারা দেশে খুব শক্তিশালী অবস্হানে।
বর্ধিত সভা শেষে আমি ও কালাম ভাই (এমপি, গুলশান) গেলাম যাদু ভাই এর মগবাজার বাসায়। কালাম ভাই সভাপতি আমি সেক্রেটারী বৃহত্তর চট্রগ্রাম জেলা জাতীয় ছাত্রদল। দুপুরের দিকে দেখা হলো জমিদার পুত্রের সাথে। গৌর বর্নের খানদানী চেহারা,প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব বান যাদু ভাই কে সামনা সামনি দেখে পুচকে আমি রীতিমত ভড়কে গেলাম।কালাম ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন।অাগ্রহ নিয়ে যাদু ভাই দু একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন করলেন। দুরু দুরু বক্ষে জবাব দিলাম। বুজলাম তিনি খুশি হয়েছেন। ৫০ টি টাকা দিলেন আমাকে।মহা খুশিি আমি সালাম দিয়ে বিদায় নিলাম।
৭৭ সালের শেষ দিগে আমাদের হতচকিত করে ব্যারিষ্টার সলিমুল হক খান মিল্কীর নেতৃত্বে চট্রগ্রামের প্রায় সব ন্যাপ নেতা জাগদলে যোগ দিয়ে বসেন। হতভম্ব আমি বিচলিত হয়ে বন্ধু সহযোদ্ধা তৌহিদুল আনোয়ার ও সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়াকে সাথে যাদু ভাই কে ফোন করলাম। যাদু ভাই বল্লেন “কুছ পরোয়া নেহী।তুমি আছ তাতেই খুশি। আমি চট্রগ্রাম আসছি,মিটিং এর বন্দোবস্ত কর”।দু দিনের মাথায় তিনি এলেন।বিমান বন্দরে জড়িয়ে ধরলেন আমায়।হোটেল শাহজাহানে উঠালাম। বিকালে জে এম সেন হলে সভা।নিউ জার্সি অবস্হানরত বর্তমান বিএনপি নেতা সেলিম দলবল নিয়ে হলে উপস্হিত। সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়ার কন্ঠে গগন বিদারী শ্লোগান। এডভোকেট কবির চৌধুরী সভার সভাপতি। যথারীতি আমি সভার উপস্হাপক। কানায় কানায় পরিপূর্ণ হলে যাদু ভাই চমৎকার বক্তিতা দিলেন।কৌতুক করে বল্লেন আগে গেলে বাঘে খায়,পিছে গেলে সোনা পায়। তিনি সবাই কে তার উপর আস্হা রাখতে বল্লেন। রাতে সাংবাদিক দের সাথে মতবিনিময় হোটেল শাহজাহানে। চমকিত হবার মতো কিছু বক্তব্য রাখলেন যাদু ভাই।
ঢাকায় গিয়ে জাগদলের প্রচন্ড ও সর্বাত্মক বিরোধীতার মুখে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট গঠন হলো।রাষ্ট্রপতি জিয়া ছিলেন এ প্রশ্নে অটল।রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হলো।জিয়া তখন নির্বাচিত রাষ্টপতি। যাদু ভাই সিনিয়র মন্ত্রী।যাদু ভাই ফ্রন্ট কে দলে রুপান্তরিত করার ত্বত্ত হাজির করলেন। মনে হল রাজনৈতিক অংগনে বিশেষ করে ন্যাপে সুনামী বলে গেল।যাদু ভাই ছিলেন দৃঢ়কল্প। গঠিত হলো বিএনপি। প্রথম কমিটির সবাই ন্যাপ এর নেতৃবৃন্দ। সংসদ নির্বাচন হলো। একচেটিয়া ন্যাপের সবাই এমপি হলে গেল। যাদু ভাই হবেন প্রধান মন্ত্রী। আমরা ব্যাকুল প্রতিক্ষায়।
এত সুখ আমাদের কপালে সইলো না। আমাদের শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি অকালে প্রয়াত হলেন। আমি ছুটে এলাম পিজি হাসপাতালে। শেষ দেখা হলো। জানাজায় অংশগ্রহণ করে সংসদ এলাকায় দাফন করে ভগ্ন চিত্তে ফিরে এলাম বন্দর নগরী তে।
যাদু ভাই আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তাঁর বাসায় ও মন্ত্রনালয়ে আমার অবাধ যাতায়াত ছিলো। সিনিয়র মন্ত্রী হিসাবে বেশ কয়েকবার চট্রগ্রামে এসেছিল। আমি সব সময় সাথে থাকতাম।
আজ তাঁর জন্মদিনে হৃদয়ের সমস্ত ব্যাকুলতা দিয়ে স্মরণ করি। বাকশাল থেকে গণতন্ত্র উত্তরণে যাদু মিয়ার ভুমিকা জাতি যুগ যুগ ধরে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। যাদু ভাই, যুগ যুগ জিও।
লেখক : সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কেন্দ্রীয় এলডিপি।
(শাহাদাত হোসেন সেলিমের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)