বাছির জামাল | ২৮ জুলাই ২০১৭ | ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ
একাদশ নির্বাচনকালে সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে মানতে নারাজ বিএনপি। এ জন্য সহায়ক সরকারের যে রূপরেখা দলটি তৈরি করেছে, তাতে ‘নির্বাচনের ওই সময়ের জন্য’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছুটিতে থাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএনপি চায়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের নেতৃত্বে থাকবেন রাষ্ট্রপতি।
বিএনপির সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে আলাপে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে। তারা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না জানালেও বলেছে, দলটির প্রস্তাবনার মূল বিষয়বস্তু হবে নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা-ভূমিকার মধ্যে গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য। এক্ষেত্রে বিএনপি মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারের প্রধান রাখলে ক্ষমতায় কোনো ভারসাম্যই থাকবে না। বরং নিয়মিত সরকারের প্রধানের মতোই নির্বাচনকালেও সব ক্ষমতাই কেন্দ্রীভূত থাকবে প্রধানমন্ত্রীর হাতেই। তাই দলটি চায়, এ সময়ে শেখ হাসিনার ছুটি।
গত রমজানে দলের স্থায়ী কমিটির যে বৈঠক হয় তাতে খালেদা জিয়া স্পষ্ট করেই বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার পূর্ব শর্তই হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। আর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রথম শর্তই হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের দলের অবস্থান। খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যকে স্থায়ী কমিটির সব নেতাই সমর্থন করেছেন বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য মানবকণ্ঠকে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী দলের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, দেশে ফিরেই বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। সেখানে কী আছে তা এ মুহূর্তে বলা যাবে না। কারণ, তিনি না আসা পর্যন্ত ওই প্রস্তাব চূড়ান্ত নয়। তবে আমরা বলতে পারি, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অর্থই হলো নির্দলীয় লোকদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা। এই প্রক্রিয়ায় ১০ ভাগ টেকনোক্রেট কোটায় স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের এসব মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দিতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিন মাসের জন্য ছুটি নিতে পারেন। সংসদ তো বহাল থাকছেই। সমস্যা নেই। তখন রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। বিএনপির সহায়ক সরকারের রূপরেখায় এসব থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, দেশে এ যাবৎ ১০টি নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টিই হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। আওয়ামী লীগের অধীনে দুটি (বঙ্গবন্ধুর সময় ও ২০১৪ সালে), বিএনপি সরকারের অধীনে দুটি (জিয়াউর রহমানের সময়ে ও ১৯৯৬ সালে) এবং এরশাদ সরকারের অধীনে (১৯৮৬ ও ’৮৮ সালে)। ছয়টি নির্বাচনের ফলাফল ছিল, যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারাই থেকে গেছেন, সরকারের বদল ঘটেনি। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অতীতের নির্বাচনের দৃষ্টান্ত সুখকর নয় বলেই সহায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনাকে মানতে চায় না বিএনপি।
এ জন্য বিএনপির সহায়ক সরকারের রূপরেখায় শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল থাকলেও নির্বাচনের সময় কিছুদিন ছুটিতে যাওয়ার পাশাপাশি তার ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব করা হয়েছে। সহায়ক সরকারের রূপরেখার কয়েকটি বিকল্পের সব ক’টিতেই ‘নির্বাচনকালে শেখ হাসিনাকে ছুটিতে যাওয়ার’ প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অবশ্য প্রস্তাবে এ ব্যাপারে আলোচনার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
এ জন্য বিএনপির প্রায় সব নেতাই ক্ষমতাসীন দলকে আলোচনা বসার জন্য বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। কয়েকদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুুুদু আগামী একাদশ নির্বাচন নিয়ে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন যে, তাদের প্রথম পছন্দ আলোচনা। দ্বিতীয় পছন্দ আন্দোলন। একাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আলেনাচনা করতে ব্যর্থ হলে আন্দোলন ছাড়া তাদের কাছে কোনো বিকল্প থাকবে না।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মানবকণ্ঠকে বলেছিলেন, আমরা তো বারবার সংলাপের কথা বলছি। আমরা বারবার বলছি, সেভ দ্য কান্ট্রি, সেভ দ্য নেশন। এটা করতে হলে অবশ্যই বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, বসতে হবে। এ দেশের ইতিহাসে দেখবেন বহুবার আলোচনা হয়েছে। আলোচনা করেই সব ঠিকঠাক হয়েছে। তাদের নেতা (শেখ মুজিবুর রহমান) আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন। বহুদিন পর্যন্ত তখন আলোচনা হয়েছে। কেন হবে না?
এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সহায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপনের নেপথ্যে বিএনপির আরেকটি লক্ষ্য রয়েছে। সেটি হলো, দেশের মানুষ ও বিশ্ববাসীর কাছে এটা জানানো যে, বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায়, বিএনপি ভোট বর্জনের পক্ষে নয়, শুধু সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থেই বিএনপি এ প্রস্তাব তুলে ধরছে।