নিজস্ব প্রতিবেদক: | ২২ জুলাই ২০১৭ | ১২:৫৪ অপরাহ্ণ
রাজনীতিতে এখন নির্বাচনী উত্তাপ। নির্বাচনি আলোচনায় সরগরম রাজনৈতিক মঞ্চ। সরকার ও সরকার বিরোধী উভয় জোট প্রস্তুত হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য। ইতোমধ্যে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনের এ উত্তাপ লেগেছে ইসলামি দলগুলোতেও। জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলো। ইসলামি দলের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা আলেমরাও অংশগ্রহণ করবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতিও চলছে দলের ভেতরে ও বাইরে। ইতোমধ্যেই প্রার্থী বাছাই প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কুরবানির ঈদ থেকে প্রার্থীরা গণসংযোগও শুরু করবে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন সামনে রেখে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন ও পুনর্গঠন করছে দলটি। এর দারা উদ্দেশ্য সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করা।
জানা যায়, দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী ঢাকা-৪, নায়েবে আমির মুফতী ফয়জুল করীম বরিশাল-৫, মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমদ খুলনা-৪, মাওলানা মকবুল হোসাইন চাঁদপুর-৩, চরমোনাই পীরের ভাই মাওলানা ইসহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের বরিশাল-৪, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান গাজীপুর-২, আল্লামা সুলতান যওক নদভীর জামাতা মাওলানা জসিম উদ্দীন কক্সবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তারা নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
এছাড়া সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দীন, ঢাকা উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা আলহাজ্জ আবদুর রহমানসহ প্রমুখ নেতারা ঢাকার বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।
গোপালগঞ্জের তিনটি আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী চূড়ান্ত। গোপালগঞ্জ-১ অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, গোপালগঞ্জ-২ মাওলানা তসলিম হোসাইন শিকদার, গোপালগঞ্জ-৩ মুফতি রুহুল আমীন নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দিতে পারে ইসলামী ঐক্যজোট
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসলামী ঐক্যজোট। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো তারাও এবার তিনশো আসনে নির্বাচন করবে। তবে এখনো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয় নি। দলের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি দেশের ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রে ৩০০ আসনে তিনজন করে প্রার্থীর খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত হয়েছে। এখান থেকে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’
তবে তিনি বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইসলামী ঐক্যজোট ১০০ আসনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিবে। এসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও আগ্রহীদের গণসংযোগের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হলে প্রার্থীরা মাঠে কাজ শুরু করবে।’
ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিক আসনে আগামী তিন মাসের মধ্যেই কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি করা হবে এবং প্রত্যেক কমিটি নিজ নিজ এলাকায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবে।’
ইসলামী ঐক্যজোটে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চললেও দলের মহাসচিব আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর জন্য পৃথক রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরির প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামি দলগুলোর জন্য বৃহৎ একটি প্লাটফর্ম তৈরি চেষ্টা চলছে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবেও আলোচনা ও যোগাযোগ হচ্ছে অনেক দলের সঙ্গে। আমরা আশা করি আগামী নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।’
ইসলামী ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নিজামী নরসিংদী-৩ অথবা ঢাকা-৫, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল হামিদ (মধুপুরের পীর) মুন্সিগঞ্জ-১, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী বি-বাড়িয়া-২, মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ চট্টগ্রাম-৭, যুগ্ম মহাসচিব মুফতী তৈয়্যব ময়মনসিং-২, সাংগঠনিক সম্পদক মুফতী সাখাওয়াত কুমিল্লা-২ আসনে নির্বাচন করবেন।
এছাড়াও মাওলানা যোবায়ের আহমদ গাইবান্ধা সদর, মাওলানা আলতাফ হোসাইন কুমিল্লা-১, মাওলানা ফজলুর রহমান গাজীপুর সদর, মাওলানা লিয়াকত আলী ফরিদপুর-২, মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন গাজীপুর-৫, মাওলানা মঈনুদ্দীন রুহী চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী), মাওলানা আবদুর রশীদ মজুমদার চাঁদপুর-১, মাওলানা জসিমউদ্দীন ঢাকা-৩ ও মাওলানা আবুল কাসেম টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
খেলাফত মজলিসের প্রস্তুতি আটকে আছে জোটের সিদ্ধান্তের ওপর
বিএনপি জোটভূক্ত ইসলামি দল খেলাফত মজলিস নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক বা সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করে নি। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি আটকে আছে জোটের সিদ্ধান্তের উপর। জোটের সিদ্ধান্ত ও জোটের সঙ্গে বোঝাপড়া সম্পন্ন করেই নির্বাচনী কাজে নামবে খেলাফত মজলিস।
দলের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা এখনো প্রস্তুতি শুরু করি নি। খেলাফত মজলিস ৫০টি সংসদীয় আসনে নির্বাচনের চিন্তা করছে। আগামী ২৮ জুলাই কেন্দ্রীয় শুরা কমিটির মিটিংয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘শুরা কমিটির মিটিংয়ের পর আমাদের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে।’
খেলাফত মজলিস থেকে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক পাবনা-১, নায়েবে আমির মাওলানা সৈয়দ মুজিবুর রহমান টাঙ্গাইল-৭, নায়েব আমির মাওলানা সাখাওয়াত খুলনা সদর, মহাসচিব অধ্যক্ষ আহমদ আবদুল কাদের হবিগঞ্জ-৪, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শফিক উদ্দীন আহমদ সুনামগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করবেন।