অনলাইন ডেস্ক | ০৪ আগস্ট ২০১৭ | ৯:৩৮ অপরাহ্ণ
যৌতুক হিসেবে বাবার দেওয়া সাইকেলই প্রাণ বাঁচাল এক গৃহবধূর। স্বামীর অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে রাতের অন্ধকারে সাইকেলে চড়ে তিনঘণ্টা পথ অতিক্রম করে বাপের বাড়িতে পৌঁছান ওই গৃহবধূ। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, বছর পনেরো আগে বীরভূমের ইলামবাজার থানার নীলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা অনিমা শীলের বিয়ে হয় বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের চিরঞ্জিৎ শীলের সঙ্গে। তখন অনিমার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। তাদের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
অভিযোগ, পণের দাবিতে মাঝে মধ্যেই স্বামী তাঁকে মারধর করতেন। দিন দুয়েক থেকে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। গত বুধবার রাতে ওই গৃহবধূর মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন স্বামী। এর পরে ছেলের সামনেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গলায় গামছার ফাঁস দিয়েও মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
গৃহবধূ অচৈতন্য হয়ে পড়লে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভাবে তিনি মারা গেছেন। রাতে বাড়ির সকলে যখন ঘুমে আচ্ছন্ন, তখনই বাবার দেওয়া সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ওই গৃহবধূ। প্রায় তিন ঘণ্টা জঙ্গল ঘেরা রাস্তা অতিক্রম করে ইলামবাজারে নিজের বাপের বাড়িতে পৌঁছন তিনি। বাড়িতে পৌঁছেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন অনিমাদেবী। সকালে তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন বাপের বাড়ির লোকজন। গৃহবধূর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে ইলামবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
পুলিশ যাওয়ার আগেই অবশ্য গা ঢাকা দেয় মহিলার স্বামী চিরঞ্জিৎ। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কথা বলতে গিয়ে বার বার আঁতকে উঠছিলেন অনিমাদেবী। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আর স্বামীর বাড়িতে ফিরতে চান না। তাঁর কথায়, “রাস্তার দু’ধারে ঘন জঙ্গল। গা ছমছম করছিল। কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে ওই অবস্থায়েই সাইকেল চালিয়েছি। পথে দু’বার জ্ঞান হারান তিনি। জ্ঞান ফিরতেই আবার সাইকেল চালাতে শুরু করেছি। আমি আর ফিরতে চাই না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাইব।’’
অনিমাদেবীর ছেলে শুভজিৎ জানায়, তার সামনেই মাকে মারধর করা হয়েছে। ছোট্ট শুভজিতের কথায়, ‘‘চেষ্টা করেও বাবাকে আটকানো যায়নি। রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে দেখি মা বাড়িতে নেই। তার পরে জানতে পারি, সাইকেল চালিয়ে মামার বাড়ি চলে গিয়েছে মা।’’