অনলাইন ডেস্ক | ০৪ আগস্ট ২০১৭ | ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসা ধনকুবের মুসা বিন শমসের রহস্যমানব হিসেবেই রয়ে গেছেন। ২০১৬ সালের ১০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন স্বঘোষিত এ ধনকুবের। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রায় দেড় মাস আগে মুসার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা রেঞ্জরোভার গাড়ি ভুয়া কাগজ দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের অভিযোগে মামলার সুপারিশ করলেও রহস্যজনক কারণে নিরব হয়ে আছে দুদক।
জানা গেছে, সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপের কারণে দুদকের প্রতারণা মামলা, মানি লন্ডারিং ও শুল্ক জালিয়াতির মত গুরুতর অভিযোগ থাকলেও নিরাপদে আছেন মুসা। প্রভাবশালী ওই নেতা মুসার বেয়াই হন। নেতার মেয়েকে নিজের পুত্রবধূ বানিয়ে নিশ্চিন্তে আছেন তিনি।
দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রিন্স মুসার কিছুই হবে না। দুদক-এনবিআর কেউই কিছু করতে পারবে না। তিনি সরকারের প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ট আত্মীয়। মাঝে মধ্যে আলোচনায় আসার জন্য মুসাকে দুদকে ডাকা হয়। এর বাইরে আসলে কিছুই করার নেই।’
দুদক থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে মুসার প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা, গাজীপুর ও সাভারে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির মালিক বলে তথ্য দেন। কিন্তু এসব তথ্যের কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় দুদক তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ প্রতারণা মমলা করে। রমনা থানায় দায়ের দুদকের মামলার এজাহারেও মুসাকে প্রতারক হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, স্বঘোষিত ধনকুব প্রিন্স মুসা দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে সুইস ব্যাংকে জব্দ অর্থ, জমি ও অন্যান্য অর্থের রেকর্ডপত্র খুব দ্রুত সময়ের পেশ করার ওয়াদা করে। কিন্তু প্রায় দেড় মাস অতিক্রম করলেও তিনি কোনো নথিপত্রই পেশ করেননি। এমনকি এ নিয়ে কমিশন বা অনুসন্ধান কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি।
স্বাধীন কমিশন দুদকের সঙ্গে একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতারণা করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে যথা সময়ে সেসব তথ্য-প্রমাণ পেশ করেননি।
এ বিষয়ে দুদক জানায়, গাজীপুর ও সাভার এলাকায় তার নামে ১ হাজার ২শ’ বিঘা জমি আছে বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেন মুসা। কিন্তু ওই জমির নথিপত্র চাওয়া হলে তা দিতে ব্যর্থ হন।
অনুসন্ধান করেও ওইসব জমির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে মুসা মিথ্যা, ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন।
সম্পদ বিবরণীতে আরও বলা হয়, সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলারের (৭১১ কোটি টাকা) স্বর্ণালঙ্কার, একটি ব্যাংক হিসাবে নগদ প্রায় ১ লাখ ডলার জমা আছে। ওইসব সম্পদের বিপরীতে কোনো নথিপত্র জমা দেননি তিনি। এমনকি মুসার সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া অর্থের খোঁজ বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্সটিটিউট ইউনিট (বিএফআইইউ) পায়নি।
এতসব অনিয়ম আর অভিযোগের পর ডেটকো প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক মুসা বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগে প্রতারণা মামলা করে দুদক।
তবে দুদকের দোদুল্যমান ভূমিকার কারণে রহস্যমানব হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মুসা। এই রহস্য আরও ঘণীভূত হয়েছে এনবিআরের দুটি মামলা করার সুপারিশ দুদক আমলে না নেওয়ায়।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে অবৈধভবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। এরপর ২০১৪ সালের জুন মাসে বিজনেস এশিয়া নামের একটি ম্যাগাজিনে মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে মুসা বিন শমসেরের সম্পদের পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলার (৫১ হাজার কোটি টাকা প্রায়) উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের সূত্র ধরে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
তখন দুদক জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে মুসার বিরুদ্ধে স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১৯ মে মুসার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে দুদক।
২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে সম্পদ বিবরণী জমা দেন প্রিন্স মুসা। সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে ১২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ফ্রিজ অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সুইস ব্যাংকে ৯০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) অলঙ্কার জমা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া দেশে তার সম্পদের মধ্যে গুলশান ও বনানীতে দুটি বাড়ি, সাভার ও গাজীপুরে ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির কথাও বিবরণীতে উল্লেখ করেন প্রিন্স মুসা।