আরিফ ফুয়াদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় | ২৩ মার্চ ২০১৮ | ৮:৪১ অপরাহ্ণ
জাফর ইকবালের ওপর জঙ্গি হামলার বিষয়টি আমলে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান এবং সাবেক ১২ শিক্ষককে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় এনেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)।
এসব শিক্ষকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আরএমপি কমিশনার মাহাবুবর রহমান বলছেন, নিরাপত্তা পাওয়া শিক্ষকরা ইতিমধ্যে বেশকিছু ব্যক্তি, সর্বহারা বা জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন। এসব তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাই এসব শিক্ষকের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া ১২ শিক্ষক হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম, সহকারী অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান ইমাম, অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এসএম আবুবকর, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরকার সুজিত কুমার, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক সাদেকুল আরেফিন মাতিন, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন এবং ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক আমিরুল ইসলাম কনক।
এসব শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ও অধ্যাপক মুহাম্মদ হাসান ইমাম বাড়ির বাইরে গেলে তাদের নিরাপত্তায় পোশাকধারী এবং সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকছে। ক্যাম্পাসে অবস্থানের সময়ও হাসান ইমামের জন্য পুলিশ পাহারা রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া বাকি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন। তাদের কেউ চাইলে সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার কথাও ভাবছে পুলিশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, গত ৩ মার্চ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর প্রকাশ্যে হামলার পর তারা বেশি তৎপর হয়েছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সময় হুমকি পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে। তাই হুমকিতে থাকা শিক্ষকদের তালিকা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া এসব শিক্ষকের অনেককেই ২০১৫ সাল থেকে নানাভাবে ‘লাল বাহিনী’, ‘চরমপন্থী গ্রুপের নেতা’, ‘পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি’ ও ‘জনযুদ্ধের কমান্ডার মেজর জিয়া’-এসব পরিচয়ে হুমকি পেয়েছেন। তাদের বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর নামেও হুমকি দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও অন্তত ৩০ শিক্ষককে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নগরীর মতিহার থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, জাফর ইকবালের ওপর হামলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমাদের কাছ থেকে শিক্ষকদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি আর নেয়নি পুলিশ। এখন তারা নিজেরা তালিকা করে হয়তো নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা অন্য সময়ের থেকে এখন অনেক বেশি।