অনলাইন ডেস্ক | ০৯ জুন ২০১৭ | ১০:৪১ অপরাহ্ণ
‘বনমালী গো পরজনমে হইও রাধা’। নারী মনের বেদনা ভরা গানটি গুনগুনিয়ে সুর দিচ্ছেন। গাল ভরা পান। পানের ছোবড়া জিবের ডগায় ঠেলে ঠেলে এ গাল থেকে ও গালে দিচ্ছেন। প্রায় যোগ আসনে বসে পান বানিয়ে দিচ্ছেন অন্যজনকে। ডান হাতের মধ্য আঙ্গুলে খানিক চুন তখনও লেগে আছে। চুন লেগে আছে নিচের ঠোঁটের কোণেও।
ছোট বেলায় খুলনায় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনে গান শিখেছিলেন কণা। সেই সময় হারমোনিয়ামেও বেশ দখল নিয়েছিলেন। মন্দিরা বাজালে নাকি হাত দেখার জো থাকেনি।
হারমোনিয়াম-মন্দিরার তাল ভুলে গেছেন বহু বছর আগে। বিয়ের পরেই সুরযন্ত্রগুলো বেসুরা হয়ে ওঠে কণার। আর যৌন পেশায় আসার পর থেকে সংগীত জীবন তার কাছে বেদনার স্মৃতি। ওস্তাদ মুখে শেখা গানের কিছু কিছু অন্তরা মনে রেখেছেন। ওস্তাদের মুখে শোনা ‘বনমালী গো পরজনমে হইও রাধা’ গানটি নাকি এখনও তার গোটা মুখস্ত। ভালো লাগার গানটি মন খারাপ হলেই সুর তোলেন।
শুক্রবার দুপুর বেলা। ফার্মগেট পার্কের গাছ তলায় তখন বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা বিশ্রাম নিচ্ছে। বকুল তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে কণা আর জাহানও। সারারাত রাস্তায় গতর খেটে ঘণ্টা খানিক আগে ঘুম থেকে উঠেছে। দুপুরের খাবার সেরে একটি আয়েশি ভঙ্গিতে বসে পান চিবাচ্ছেন।
জাহানের এক পায়ে নুপুর। নুপুর এক জোড়াই কিনেছিল। জোড়া ভেঙে একটি নুপুর মেয়েকে দেন জাহান।। মেয়ে খুলনার একটি স্কুল থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিংয়ে করছে। ভালো ছাত্রী বলে মত দিলেন। রাতে খদ্দরের পকেট থেকে যা আসে, তার একটি অংশ মেয়েকে পাঠিয়ে দেন। মেয়ে থাকেন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বাবার কাছে খুলনায়।
ছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ে রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার একটি স্কুলে। থাকা-খাওয়া বাবদ ৬ হাজার টাকা মাসে দিতে হয় ছেলেকে। ছেলে পেটে থাকতেই স্বামী আরেক জায়গায় বিয়ে করেন। এরপর খুলনার বিভিন্ন হোটেলের অন্ধকার সিঁড়িতে পা রাখেন জাহান। আর আলো দেখা হয়নি। স্বজনরা জানেন ঢাকায় বুয়ার কাজ করেন। প্রতি রাতে এ রাস্তা থেকে ও রাস্তায় খদ্দরের হাত বদলে খদ্দর ধরেন। জীবনের রং আর বদলায় না জাহানের। রাতে রাস্তায় আর দিনে এই পার্কেই। তবে গতর খাটিয়ে বছর খানিক আয় করে খুলনায় গিয়ে দোকান দেবেন বলেও স্বপ্নের কথা জানান।
ঈদ প্রসঙ্গে আলাপ তুলতে তিনি বলেন, ‘এবার যাওয়া হবে না। গতবার গেছিলাম। মাইয়্যার জন্য থ্রি-পিস পাঠামু। ছেলেরে পাঞ্জাবি দিমু।আমি গতর খাটাই।তাতে কি? মাইয়্যার ঈদ আর আমার ঈদ তো এক না।’
আলাপের মাঝখানেই ১৩ বছরের ছেলে এসে হাজির। মা জাহান পাজামার পকেট থেকে ৫০ টাকা বের করে ছেলের হাতে গুজে দিয়ে বলেন, ‘এখন যাও বাবা। কাল আবার আইসো।’সূত্র : জাগোনিউজ